Tuesday, 4 June 2019

পল ডিরাকের কোয়ান্টাম ভালোবাসা - পর্ব-৪ (শেষ পর্ব)




আসলেই কিছুটা বদলে গেছেন ডিরাক। অনেকের মতে তিনিও নোবেল ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছেন। নোবেল পুরষ্কার পাবার পর বিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক কাজের গতি কমে যায়। ডিরাকও মনে করছেন তাঁর গতি কমে যাচ্ছে। বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে তাঁর। আবার মনে হচ্ছে কী দরকার নতুন করে অসুখী হবার।
            
তাঁর মা-বাবার মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বাবা এই বয়সে আরেকজনের সাথে থাকতে শুরু করেছেন। তাঁর মা প্রচন্ড মানসিক কষ্টে আছেন। ডিরাক বুঝতে পারেন না, যে মানুষ ভালোবেসে বিয়ে করে তাদের ভালোবাসা কেমন করে মরে যায়। ডিরাকের মা-বাবার মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবার উপক্রম হলো।
            
ডিরাকের ছোটবোন বিয়াট্রিস পড়াশোনায় খুব একটা ভাল করতে পারেনি। মা-বাবাকে সেই দেখাশোনা করতো। কিন্তু বাবার আচরণে সেও খুব ক্ষুব্ধ। বিয়াট্রিস ঠিক করেছে বাবার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে একটা সেক্রেটারির চাকরি নিয়ে।
            
ডিরাকের বাবা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অনেকদিন হাসপাতালে থাকার পর ১৯৩৬ সালের ১৫ জুন তিনি মারা যান।
            
বাবার মৃত্যুর পর ডিরাক হঠাৎ এক ধরনের মুক্তির স্বাদ পেলেন। তাঁর মনে হলো তিনি এখন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
            
ডিরাকের মায়েরও একই অনুভূতি হলো। বেঁচে থাকতে চার্লস একটা পয়সাও খরচ করতে চাইতেন না। মৃত্যুর পর দেখা গেলো তাঁর সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রচুর। উইলে তিনি অর্ধেক দিয়ে গেছেন তাঁর ছেলে ও মেয়েকে, অন্য অর্ধেক দিয়ে গেছেন স্ত্রীকে। ফ্লোরেন্স স্বামীর শোকের চেয়েও স্বস্তি পেলেন অনেক।
            
ডিরাক আবার রাশিয়া ভ্রমণে গেলেন। পিতৃশোক তিনি বুঝতে পারছেন না, কিন্তু একটা অস্বস্তি যাচ্ছে না কিছুতেই। বাবাকে তিনি কোনদিনই ভালবাসতে পারেন নি। অথচ মানুষটা মারা যাবার পর কিছুটা খালি খালিও লাগছে। মার্গিটকে লিখলেন বাবার সম্পর্কে তাঁর ঘৃণার কারণগুলো। মার্গিট ডিরাককে সান্ত্বনা দেন, বলেন সব ভুলে যেতে।
            
রাশিয়া থেকে ফিরে ডেনমার্কে নিল্‌স বোরের ইনস্টিটিউটে যান ডিরাক। সেখানে জিনেটিক্স সংক্রান্ত একটা সেমিনারে গিয়ে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো তাঁর। জিনেটিক্স সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি। যখন জানলেন যে মা-বাবার জিন সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয় - তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। মার্গিটকে লিখলেন - ভেবেছিলাম বাবার কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি আমি, কিন্তু বাবার জিন আমার শরীরে বইছে। এর থেকে মুক্তি নেই আমার।
            
কেমব্রিজে ফিরে এসে নতুন উদ্যমে গবেষণা শুরু করলেন। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছেন না। তাঁর বাবার জিন তাঁর শরীরে। বিয়ে করলে তাঁর যদি সন্তান হয় - তাহলে সেই সন্তানের মধ্যে তাঁর জিন যাবে যাতে তাঁর বাবার জিনও আছে। বাবার জিন-প্রবাহ বন্ধ করতে হলে তাঁর উচিত কখনোই বিয়ে না করা, অথবা বিয়ে করলেও সন্তান না হওয়া।
            
মার্গিটের ব্যাপারে ভাবছেন ডিরাক। মার্গিটের স্বভাব বিশ্লেষণ করে দেখেছেন কোন মিলই নেই তাঁর সাথে। কিন্তু মাঝে মাঝে মার্গিটের কর্তৃত্বপরায়ণতা দেখলে তাঁর বাবার কথা মনে পড়ে। ডিরাক ভেবে পান না মার্গিটকে বিয়ে করবেন কিনা। কারো পরামর্শ নিতে পারলে ভালো হতো। মাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। কারণ মা তাঁর নিজের কর্তৃত্বের ভাগ কাউকেই দিতে রাজি হবেন না। উইগনারকে জিজ্ঞেস করলেও কোন লাভ হবে না। কারণ উইগনার তো তাঁর বোনের পক্ষেই বলবেন। তাছাড়া উইগনার তখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাডিসন ইউনিভার্সিটিতে চলে গেছেন। সেখানে তাঁর সহকর্মী অ্যামেলিয়া ফ্রাঙ্ককে বিয়ে করার চেষ্টা করছেন। উইগনার মার্গিটকে আমেরিকায় ডেকে পাঠালেন অ্যামেলিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
            
মার্গিট আমেরিকায় যাবার আগে কেমব্রিজে এলেন ডিরাকের সাথে দেখা করতে। ডিরাক মার্গিটকে নিয়ে গেলেন মিসেস ইজাবেল হোয়াইটহেডের কাছে। মিসেস হোয়াইটহেড কেমব্রিজে ডিরাকের ক্লাসমেট হেনরির মা। হেনরির বাবা রেভারেন্ড হেনরি মাদ্রাজে চার্চের বিশপ ছিলেন। ইজাবেল ভারতীয় খ্রিস্টান। ডিরাককে খুব স্নেহ করেন তিনি। ডিরাক ভাবলেন মিসেস হোয়াইটহেড মার্গিটের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। মিসেস হোয়াইটহেডের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে মার্গিট সাউথহ্যাম্পটন থেকে জাহাজে চড়ে আমেরিকা চলে গেলেন।
            
মিসেস হোয়াইটহেড মার্গিটের সাথে কথা বলে বেশ খুশি হলেন। ডিরাককে বললেন, মার্গিট খুব ভালবাসে তোমাকে। সিদ্ধান্ত নিলে এখনই নিতে হবে। তোমাদের স্বভাবের মিল নেই ঠিক, কিন্তু মনের মিল হলেই তোমরা সুখী হবে।
            
কিন্তু একটা ব্যাপারে মিসেস হোয়াইটহেড খুব একটা সন্তুষ্ট নন। তা হলো ডিরাক আর মার্গিট কেউই বিয়ের ব্যাপারে ঈশ্বরের হাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
           
দেখো পল, বিয়ে হয় ঈশ্বরের ইচ্ছেয়। ঈশ্বর স্বর্গ থেকে ঠিক করে দেন কে কাকে বিয়ে করবে। স্বর্গীয় প্রেম না থাকলে কোন বিয়েই টিকে না।
           
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। বিয়ে করলে নিজেদের সিদ্ধান্তেই করবো।
            
কিছুদিন পর মার্গিট ফিরে এলেন আমেরিকা থেকে। ডিরাক তাঁকে রিসিভ করতে গেলেন সাউথহ্যাম্পটন ডকে। গাড়িতে লন্ডনে আসার সময় তাঁর স্বাভাবিক নিরাবেগ গলায় মার্গিটকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে বিয়ে করবে মার্গিট?
            
হ্যাঁ বলতে এক সেকেন্ডও দেরি করলেন না মার্গিট।
            
ডিরাক তাঁর মাকে যখন বললেন বিয়ের সিদ্ধান্তের কথা - খুবই ধাক্কা খেলেন ফ্লোরেন্স। তাঁর মনে হলো তাঁর সাম্রাজ্যের পতন হতে চলেছে। ছেলের ওপর থেকে নিজের কর্তৃত্ব সরিয়ে নিতে হবে ভাবতেই তাঁর খারাপ লাগতে শুরু করলো। তিনি মার্গিটের সাথে দেখা করতে গেলেন মার্গিটের হোটেলে।
            
ব্লু মস্‌বেরির রাসেল স্কোয়ারে ইম্পেরিয়েল হোটেলে উঠেছেন মার্গিট। হবু শাশুড়ির সাথে কথা বলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলো মার্গিটের। ৩৫ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এটাতেই তো খুশি হওয়া উচিত যেকোন মায়ের। অথচ ডিরাকের মা কেন এত অসুখী বুঝতে পারেন না মার্গিট। ফ্লোরেন্স বলেন মার্গিটকে, তোমাদের তো শীঘ্রই বড় বিছানা লাগবে।
            না, না। আমার নিজের আলাদা বেডরুম থাকবে। আমার বেডরুমে পলকে আমি ঢুকতেই দেবো না।
            তাহলে তাকে বিয়ে করছো কেন?
            কারণ আমি তাকে ভালবাসি এবং আমার একটা নিজের ঘর দরকার।
            
ফ্লোরেন্স ডিরাককে চিঠি লিখে জানালেন সবকিছু। বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে পলকে সরানোর জন্য শেষ চেষ্টা করলেন, মার্গিট খুবই ভালো মেয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু এখনো ভেবে দেখ - সে কিন্তু নিজের সুবিধার জন্যই তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।


 
            
১৯৩৭ সালের ২রা জানুয়ারি সেন্ট্রাল লন্ডনের হলবর্ন রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন ডিরাক ও মার্গিট। বিয়েতে ডিরাকের মা ও বোন এবং মিস্টার ও মিসেস হোয়াইটহেড ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বিয়ের পর রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে অতিথিরা যে যাঁর বাড়িতে চলে গেলেন। বিয়ের কোন ছবি তোলা হয়নি। ব্রাইটনের হোটেলে গিয়ে উঠলেন নব দম্পতি। সেটাই তাঁদের হানিমুন। 




কয়েক সপ্তাহ পর মার্গিট চলে গেলেন বুদাপেস্টে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে। যাবার আগে ডিরাককে বলে গেলেন সুখী দাম্পত্য-জীবন সম্পর্কিত কিছু বইপত্র পড়তে।

           
 কেমব্রিজে ফিরে এসে ডিরাক একটা বাড়ি খুঁজতে লাগলেন আর রোমান্টিক বই-পত্র পড়তে লাগলেন। সুখী দাম্পত্য জীবনে স্বামীর উচিত স্ত্রীকে রোমান্টিক ভাষায় চিঠি লেখা জাতীয় উপদেশ পেয়ে ডিরাক মার্গিটকে চিঠি লিখলেন - রোমান্টিক চিঠি:
            আমার জীবনের প্রথম প্রেমপত্র তোমাকে লিখতে বসেছি। যতই দিন যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি তুমিই আমার জীবনের একমাত্র প্রেম। বিয়ের আগে আমার মনে হয়েছিল বিয়ের পর সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হবে আমার। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে যত বেশি জানতে থাকবো তত বেশি ভালোবাসতে থাকবো। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাও কি এরকম বাড়তে থাকবে, নাকি এখনই আমি তোমার সর্বোচ্চ ভালোবাসা পাচ্ছি?
            
ডিরাক বইতে পড়েছেন স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে হয়। ডিরাক লিখলেন, তোমার ফিগার খুবই সুন্দর, তোমার শরীর উত্তেজনাকর মসৃণ। তোমার শরীরের সবকিছুর মালিক এখন আমি ভাবতেই সুখ লাগছে আমার। তুমি কি মনে করো আমার ভালবাসা বড় বেশি শারীরিক হয়ে যাচ্ছে? প্রিয়তমা, তুমি আমার ভালোবাসা। তুমি আমাকে মানবিক করে তুলেছো। আমার জীবনে আর কোন সাফল্য না এলেও আমি শুধু তোমাকে নিয়ে সুখে বেঁচে থাকতে পারবো। আমার মনে হচ্ছে আমি যদি তোমাকে সুখী করতে পারি তাহলেই আমি সার্থক।
            
ডিরাকের চিঠি পেয়ে যতটা খুশি হওয়া উচিত ততটা খুশি হতে পারলেন না মার্গিট। কারণ এরকম চিঠিতে সহজাত ডিরাক অনুপস্থিত। মার্গিট ডিরাককে জানালেন যে তাঁর জোর করে রোমান্টিক হবার দরকার নেই। তিনি যেমন আছেন তেমন থাকলেই চলবে।
            
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে বেশ হৈ চৈ পড়ে গেলো ডিরাকের বিয়ের সংবাদে। কেউ চিন্তাও করতে পারেন নি যে ডিরাক মার্গিটের মত বিপরীত-স্বভাবের কাউকে বিয়ে করতে পারেন। রাদারফোর্ড তাঁর স্বভাবসুলভ উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন - ডিরাকের মত লোককে সামলানোর জন্য অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে দরকার ছিলো। উইগনারের বোনের আট বছরের অভিজ্ঞতা আছে।
            
সহকর্মী সহ-পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে মার্গিটকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় ডিরাক সবসময় উইগনারের বোন-ই বলতেন, কখনোই আমার স্ত্রী বলতেন না। কেন এরকম করতেন প্রশ্ন করলে ডিরাক কোন জবাব দিতেন না।
            
১৯৩৭ সালের এপ্রিলে মার্গিট ফিরে এলেন কেমব্রিজে তাঁর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। ডিরাক মার্গিটের ছেলে-মেয়েকে আইনগত ভাবে নিজের করে নিলেন। গ্যাব্রিয়েল ও জুডিথ ডিরাক পদবী গ্রহণ করলো। কেমব্রিজের কাছে একটা বড় বাড়ি কিনলেন ডিরাক ও মার্গিট। ১৯৪০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি তাঁদের প্রথম কন্যা মেরির জন্ম হয়। দুবছর পর ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় তাঁদের দ্বিতীয় কন্যা মনিকা।

 বাবা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে সব দায়িত্ব পালন করেছেন ডিরাক। চার সন্তানের প্রতিই তিনি সমান স্নেহশীল ছিলেন। ছেলেমেয়েদের সাথে কখনোই রাগ করেন নি। তাদের সাথে নিয়মিত খেলাধূলা করেছেন। প্রত্যেক গ্রীষ্মকালে সবাইকে নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে যেতেন দূরে কোথাও। প্রত্যেক রবিবার সকালবেলা মেয়েদের নিয়ে সাইকেল চালাতে যেতেন। বাড়ির লনে বাগান করেছেন নিজের হাতে। প্রতি শনিবার ও রবিবার বিকেলে বাগানের কাজ করতেন। নিজেদের গাছ থেকে আপেল পেড়ে একটা একটা করে ধুয়ে মুছে গ্যারেজের দোতলায় সাজিয়ে রাখতেন অনেক যত্নে। স্কেল দিয়ে মেপে দেখতেন যেন প্রত্যেকটা আপেল পরস্পর থেকে সমান দূরত্বে থাকে।
            
কুকুর পছন্দ করতেন না ডিরাক। কিন্তু মেয়েদের আবদারে তাদের বিড়াল কিনে দিয়েছিলেন। বিড়াল ঢুকার জন্য দরজা তৈরি করতে গিয়ে বিড়ালের গোঁফের দৈর্ঘ্য মেপে দেখতেন দরজার মাপ ঠিক করতে।
            
গ্যাব্রিয়েল ও জুডিথ বড় হয়ে যাবার পর যে যার ইচ্ছেমত কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। মেরি আর মনিকাকে প্রতি সন্ধ্যায় নিজের হাতে গণিত আর পদার্থবিজ্ঞান শেখাতেন ডিরাক। তারা আরেকটু বড় হবার পর তাদের যখন যা দরকার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু তারা যখন জিজ্ঞেস করতো তাদের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত - ডিরাক সবসময় বলতেন, তোমার যা ভালো লাগে তাই হও। মনযোগ ও ভালোবাসা থাকলে অবশ্যই ভালো করবে।

মার্গিটের সাথে ডিরাকের সম্পর্কটা ভালোভাবেই টিকে গিয়েছিল। ডিরাক বিয়ের পরও খুব একটা বদলাননি। মানুষের সঙ্গ তিনি এড়িয়ে চলেছেন বরাবরই। অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে পছন্দ করেন না বলে কোন ধরনের দাম্পত্য-কলহ তাঁদের কখনোই হয়নি। সংসারে যা বলার একা মার্গিটই বলে গেছেন। আর ডিরাক চুপচাপ শুনেছেন। এভাবেই নীরব সুখে কেটেছে তাঁদের ৪৭ বছরের দাম্পত্য জীবন। তবে মার্গিটের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন ডিরাক। গান শুনতে শিখেছেন। যদিও কনসার্টে কখনো যেতেন না - কারণ সেখানে দর্শকের কাশির শব্দে নাকি তাঁর মনযোগ ব্যাহত হতো। তিনি ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনতেন রেডিওতে - আলো নিভিয়ে, চোখ বন্ধ করে।
            
সারাজীবনে দুই শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পরেও অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। রয়েল সোসাইটির রয়েল মেডেল পেয়েছেন ১৯৩৯ সালে, ম্যাক্স প্ল্যাংক মেডেল ১৯৫২ সালে, ১৯৬৯ সালে পেয়েছেন মায়ামি ইউনিভার্সিটির ওপেনহেইমার প্রাইজ আর ১৯৭৩ সালে পেয়েছেন অর্ডার অব মেরিট।
            
১৯৬৯ সালে ডিরাক লুকাসিয়ান প্রফেসর পদ থেকে অবসর নেন। ১৯৭১ সালে সপরিবারে ফ্লোরিডা চলে যান। সেখানে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। সেখানেই ছিলেন আমৃত্যু। ১৯৮৪ সালের ২০শে অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে মারা যান পল ডিরাক।
            
ডিরাকের মৃত্যুর পর ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান পাঠাগারের নাম রাখা হয় ডিরাক সায়েন্স লাইব্রেরি। মার্গিট ডিরাক এই লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন।   
            
ডিরাকের মৃত্যুর পর আরো আঠারো বছর বেঁচে ছিলেন মার্গিট। ২০০২ সালের ৯ই জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। 


1 comment:

  1. পল ডিরাকের জীবনী এক টানে পড়ে ফেললাম। বহুদিন পর একটানা একটা লেখা পড়লাম। অসধারন লিখেছেন, মনে হচ্ছে পল তার নিজ হাতে ডায়েরি লিখে গেছেন।
    আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Latest Post

James Watson – an extraordinary scientist, but an intolerable racist and misogynist man

  The “Eagle” pub on the Cambridge campus has become as famous as Cambridge University itself, having witnessed hundreds of discoveries, inn...

Popular Posts