Wednesday 1 December 2021

বুদ্ধদেব বসুর 'এক পেয়ালা চা'

 



বুদ্ধদেব বসুর গল্পের বই ‘এক পেয়ালা চা’। কলকাতার ইস্টার্ন ল হাউজ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪৫ বাংলায়। এখন ১৪২৮ বাংলা। তার মানে ৮৩ বছর আগে। সেই সময়ের তুলনায় শৈল্পিক চিন্তায় আমরা খুব বেশি এগোতে পারিনি এখনো। ৭৮ পৃষ্ঠা বইয়ের দাম ছিল তখন ছয় আনা। ‘এক পেয়ালা চা’, ‘বঙ্কুর বই লেখা’, ‘খুকীর নাম’, ‘ট্যানীর ভাবনা’, এবং ‘দিনে দুপুরে’ – এই পাঁচটি গল্প নিয়ে এই বই।

প্রথম গল্প: এক পেয়ালা চা

গিরিডিতে শীতের সময়ে বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে এই ঘটনা। সবাই সেখানে উশ্রী ফল্‌স-এ যাবার কথা বলে। এটা ছোটদের জন্য লেখা গল্প। হাস্যরস তৈরির জন্য। ভোম্বলকে সাথে নিয়ে গিরিডি থেকে উশ্রী ঝর্ণা দেখতে গেছে। ফেরার সময় চায়ের তৃষ্ণা পেয়ে গেল। কাছাকাছি এক বাঙালির বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো দুজন। তারা ভেবেছিল গৃহকর্তা তাদের আপ্যায়ন করবে। কিন্তু করলো না। অনেকক্ষণ দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে দু’গ্লাস পানি খেতে দিলো দু’জনকে। চায়ের কথা মুখ ফুটে বলার পরেও ওরা চা পায়নি। লেখক বাঙালি বাড়ির পরিচয় দিয়েছেন বরিশালের বাঙালি বলে। বরিশালীদের উপর কি কোন রাগ ছিল লেখকের? হাস্যরস সৃষ্টির ব্যাপারটা এখানে খুব একটা সফল হয়নি বলে আমার ধারণা।

দ্বিতীয় গল্প: বঙ্কুর বই লেখা

বঙ্কুর বন্ধুরা সবাই লেখক। বঙ্কু বেশ সুন্দর গল্প করে। তাই বঙ্কুকে বন্ধুরা বললো বই লিখতে। বঙ্কু অলস। বই লিখতে আগ্রহী নয়। কিন্তু যখন বলা হলো বই লিখলে টাকা পাওয়া যায় – বড় বই লিখলে একশ টাকা পাওয়া যাবে – বঙ্কু খুব উৎসাহী হয়ে উঠলো। ঠিক করলো তিমি মাছের ঘটনা নিয়ে বই লিখবে। তারপর থেকে তার দিনরাত শুধু বই লেখা নিয়ে আলোচনা। বন্ধুরা জানতে চাইলে বঙ্কু বলে – বইলেখা প্রায় শেষ, আর সামান্য একটু বাকি। তারপর অনেক মাস চলে যায়। বঙ্কুর বই কিংবা বঙ্কু – কোনটারই দেখা না পেয়ে বঙ্কুর বন্ধুরা একদিন বঙ্কুর বাড়িতে গিয়ে আবিষ্কার করে – বঙ্কু এতদিনে একটা লাইন শুধু লিখতে পেরেছে – “তিমি উপাখ্যান”। এই হলো গল্প। বুদ্ধদেব বসুর উপর আমার প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল বলে বেশ হতাশ হয়েছি। তবে একটা তথ্য এখানে ভাবায় – ৮৩ বছর আগে একটা বই লিখে এক শ টাকা সম্মানী পাওয়া যেতো – যখন একটি বইয়ের দাম ছিল মাত্র ছয় আনা। এখনকার দিনে একটা বইয়ের জন্য কত সম্মানী পাওয়া উচিত?

তৃতীয় গল্প: খুকীর নাম

আভা তার নিজের নাম নিয়ে খুশি নয়। তাকে খুকী বলে ডাকা হতো। তাও তার পছন্দ নয়। তার দিদির যখন মেয়ে হলো – সবাই এবার তাকেই খুকী বলে ডাকতে শুরু করলো। আভা খুকীর জন্য নাম ঠিক করতে যায়। এমন একটা নাম হবে যা আর কারো নেই। তার দুই দাদার সঙ্গে এ নিয়ে ঝগড়া করে। খুবই সাধারণ গল্প। স্কুল-কলেজের ম্যাগাজিনেও এর চেয়ে অসাধারণ গল্প ছাপানো হয়। এ গল্প বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন বলেই হতাশ হয়েছি বেশি।

চতুর্থ গল্প – ট্যানির ভাবনা

একটি কুকুরের ভাবনা তার মনিবকে ঘিরে। মনিব শাড়িপরা একজন মানুষ যিনি লেখেন। কুকুরের জবানিতে লেখা গল্প। কুকুর আবার গল্পের মধ্যে স্বপ্নও দেখে একটা – যেখানে একটি নেকড়ে মুরগি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। শব্দের উপর ভাষার উপর দখলের কারণে কত বিষয়েই একটা গল্প হয়ে যেতে পারে – গল্পের কোন উপাদান ছাড়াই। ট্যানির ভাবনাও সেরকম।

পঞ্চম গল্প – দিনেদুপুরে

এই গল্পটিও উত্তমপুরুষে লেখা। একজন তরুণ ডাক্তারের জবানিতে লেখা। প্রচন্ড গরমের দুপুরবেলা ডাক্তার ট্রামের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। খুব গরীব একটা মেয়ে তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে। ডাক্তার গিয়ে দেখেন বালিকার দরিদ্র মায়ের এখন-তখন অবস্থা। তাকে বাঁচাতে হলে ইঞ্জেকশান দরকার। ডাক্তার দ্রুত বের হয়ে ঔষধ ইঞ্জেকশান ইত্যাদি নিয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে দেখে কেউ নেই সেখানে। একজন লোক এসে বাড়িটা বিক্রি করতে চায় তার কাছে। তার কথা থেকেই বোঝা যায় দুপুরে যে মেয়েটি গিয়ে ডাক্তারকে ডেকে এনেছিল – সে দু’বছর আগে আত্মহত্যা করেছিল। বুদ্ধদেব বসুর ভূতের গল্প!!


No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts