নবম
অধ্যায়
শুক্র গ্রহের ভূমি
শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও শুক্রের ভূমি দেখার কোন উপায় নেই। কারণ শুক্রের বায়ুমন্ডলের ঘন মেঘ শুক্রকে ঘিরে রেখেছে সবসময়। শুক্র গ্রহের ভূমির সবগুলো ছবি তোলা হয়েছে শক্তিশালী র্যাডারের মাধ্যমে। শুরুতে পৃথিবীতে স্থাপিত র্যাডারের মাধ্যমে শুক্রের ভৌগোলিক অবস্থার কিছুটা জরিপ করা হয়েছিল। তবে আমেরিকান স্যাটেলাইট ম্যাগেলান শুক্রের চারপাশে বছরের পর বছর ধরে ঘুরে ঘুরে শুক্রের ভূমি জরিপ করেছে। ম্যাগেলানের র্যাডার সিস্টেম শুক্রের হাজার হাজার ছবি তুলেছে। শুক্রের 98% ভূমির ম্যাপ বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছে সেইসব ছবি থেকে।
শুক্রের ম্যাপে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়েছে যেন আমাদের বুঝতে সুবিধা হয় কোন্টা কী। নীল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে নিচু ভূমি বোঝাতে, উঁচু ভূমিগুলো দেখানো হয়েছে হলুদ আর লাল রঙে। র্যাডারে এবড়োখেবড়ো অঞ্চলকে উজ্জ্বল দেখায়, আর মসৃণ অঞ্চলকে দেখায় অনুজ্জ্বল। ম্যাপের নীল রঙ অনেক সময় পৃথিবীর সমুদ্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু শুক্রে কোন নদী বা সমুদ্র নেই। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কোন এক সময় হয়তো পানির সমুদ্র ছিল শুক্রে। কিন্তু সেসব শুকিয়ে গেছে কত আগে। এখন শুক্রে কোন তরল পানি নেই। শুক্রের বেশিরভাগ অঞ্চল সমতল।
নারীদের গ্রহ
শুক্রের ভূমির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অংশ - যেমন পাহাড়, খাদ, গহ্বর, সমতল,
ঢাল ইত্যাদির বিবরণ দেয়ার জন্য এবং জরিপের সময় বিভিন্ন স্থানের নাম দিতে হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্র গ্রহের
সবগুলো জায়গার নাম দেয়া হয়েছে নারীদের নামে। ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শুধুমাত্র
তিনটি নাম দেয়া হয়েছিল যেগুলো নারীদের নাম নয়। সেগুলো বদলানো হয়নি। যেমন
পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের নামে শুক্রের সবচেয়ে উঁচু এবং বিস্তৃত পর্বতমালার
নাম দেয়া হয়েছিল। সে নাম রয়ে গেছে। তেমনি রয়ে গেছে আলফা রেজিও (alpha regio) এবং বিটা রেজিও (beta regio) নামে দুটো বড় অঞ্চল যেগুলোর
নাম দেয়া হয়েছিল গ্রিক অক্ষর আলফা ও বিটা অনুসরণে।
এই তিনটি নাম ছাড়া শুক্র গ্রহের ভূমির বিভিন্ন অঞ্চলের যেসব নাম দেয়া হয়েছে
সেগুলো সবই বিখ্যাত নারীদের নামে। তাদের মধ্যে পৃথিবীবিখ্যাত নারী যেমন আছেন,
তেমনি আছে বিভিন্ন সংস্কৃতির দেবীদের নামও। আছেন ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতি, আছেন
অন্নপূর্ণা, আছেন লক্ষ্মী, চন্ডী, আছেন মোনালিসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, পদার্থবিজ্ঞানী
আইরিন জুলিও-কুরি, ফ্রেন্স পিয়ানিস্ট নাদিয়া বুলেঙ্গার, আমেরিকান লেখক পার্ল বাক,
ব্রিটিশ লেখক আগাথা ক্রিস্টি, আছেন ক্লিওপেট্রা। এপর্যন্ত ২০৩০ জন নারীর নামে
শুক্রের ২০৩০টি জায়গার নাম রাখা হয়েছে।[1]
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgRXODLaTBfwse8LSxgrAfc6wscBDM2vfdLLSTWGThf6WoD6x-o_PZwn7JGwY3Jjp0imtBBO_1W-Watp3SmcZpLMhNx8Nk9STRs1uOEbdtYFWLOvUD6eXl6RBqBqVIsRI6wBfP11KOLDnCg/w400-h200/077+page+126.jpg)
শুক্রের ম্যাপ
শুক্র গ্রহকে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করে ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তার
মধ্যে দুই মেরু এবং বিষুবীয় অঞ্চলের তিনটি বিশাল অংশের নাম দেয়া হয়েছে টেরা। বিশাল
মহাদেশের আকারের ভূমিকে বলা হয় টেরা (terra)। শুক্র গ্রহের তিনটি টেরা হলো: ইশতার টেরা, লাডা টেরা ও আফ্রোদিতি টেরা।
ইশতার টেরা: শুক্র গ্রহের উত্তর মেরুর নাম দেয়া হয়েছে ইশতার টেরা। ব্যাবিলনিয়ান
ভালোবাসার দেবী ইশতারের (Ishtar) নামে রাখা হয়েছে এই মেরুর নাম। এর ব্যাস 5610 কিলোমিটার। পুরো অস্ট্রেলিয়ার সমান এই ইশতার টেরা।
লাডা টেরা: শুক্রের দক্ষিণ মেরুর নাম দেয়া হয়েছে লাডা (Lada) টেরা।
স্ল্যাভিকদের[2] ভালোবাসার দেবী লাডার নামে এই মেরুর নামকরণ করা হয়েছে। এর ব্যাস 8615 কিলোমিটার।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjZlqur85ler4dCozca2RzsbNOzr6tjs1qIG24-yzfCsfNfuD0JhRapsclyJr-Pb448GTGzLZqp8wbU7buShKSLByhbZIV4ZVWdoxl7ts3GZtMMGjzGSjOw-43Z1YStG214mWvJr1mzInWn/w396-h400/078+page+127a.jpg)
চিত্র 54: ইশতার টেরা (উত্তর মেরু)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh53OJ2A1k7w_Ky6TAZz1vsZLIK05XiKsw7qmf7bNbPhvbZVDlX99TSjSgNl7_hGgk1bw7cFgt_okjjtV6K_TDdayzouWHbGauuIM4mrTn2_1ZmlgDAfYixuQW8hF70blOCv6DL_qLeghI0/w396-h400/079+page+127b.jpg)
চিত্র 55: লাডা টেরা (দক্ষিণ মেরু)
আফ্রোদিতি টেরা: শুক্রের নিরক্ষীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জায়গার নাম আফ্রোদিতি টেরা। গ্রিক
ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতির নামে রাখা হয়েছে এই টেরার নাম। এর ব্যাস দশ হাজার কিলোমিটার।
শুক্রের দক্ষিণ গোলার্ধের এই জায়গার ক্ষেত্রফল প্রায় আফ্রিকা মহাদেশের সমান।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjzBFWn6DQQEFPHbSbmlziCbBEEmQ7J0GX6Sebva0pcums8nkt9luGuIwBHvS3yR0rugKIhnERYeZ-YaJOntL0q3w6Yz8lznbGLlG-h6wKPaKJyyoHrPHrLma2q-_l1z8sbc9HhUPEQnzdj/w400-h253/080+page+128.jpg)
চিত্র 56: আফ্রোদিতি টেরা
শুক্র গ্রহের অপেক্ষাকৃত নিচু সমতল ভূমিকে বলা হয় প্ল্যানিটিয়া (planitia)। শুক্র গ্রহের
প্ল্যানিটিয়াগুলো সৃষ্টি হয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের ফলে। ছোট বড় মিলিয়ে
এপর্যন্ত একচল্লিশটি প্ল্যানিটিয়া চিহ্নিত করা হয়েছে শুক্র গ্রহে। তাদের মধ্যে
কয়েকটি প্ল্যানিটিয়ার অবস্থান দেখানো হলো শুক্রের ম্যাপে।
গুইনেভিয়ের প্ল্যানিটিয়া: বহু শতাব্দী আগের ব্রিটিশ রাজা আর্থারের স্ত্রী গুইনেভিয়ের। গুইনেভিয়ের
প্ল্যানিটিয়ার ব্যাস 7520 কিলোমিটার।
নিওবি প্ল্যানেটিয়া: গ্রিক লোকগাথার চরিত্র সিপাইলাসের রাজা টানটালাসের
কন্যা। নিওবি প্ল্যানেটিয়ার ব্যাস 5008 কিলোমিটার।
হেলেন প্ল্যানিটিয়া: গ্রিক লোককাহিনির হেলেন - হেলেন অব ট্রয় নামে চিনি
আমরা। হেলেন প্ল্যানেটিয়ার ব্যাস 4360 কিলোমিটার।
সেডনা প্ল্যানেটিয়া: এস্কিমোদের রূপকথার চরিত্র যার আঙুলগুলো হয়ে
গিয়েছিল সিল আর তিমি। সেডনা প্ল্যানেটিয়ার ব্যাস 3570 কিলোমিটার।
তাহমিনা প্ল্যানিটিয়া: ইরানের লোকগাথার চরিত্র বীর রুস্তমের স্ত্রী তাহমিনার নামে রাখা হয়েছে এই
প্ল্যানিটিয়ার নাম। এর ব্যাস 3000 কিলোমিটার।
লাভিনিয়া প্ল্যানিটিয়া: রোমানদের পৌরাণিক কাহিনির একটি বিখ্যাত চরিত্র লাভিনিয়া। 2820 কিলোমিনার ব্যাস এই প্ল্যানিটিয়ার।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi9Qyow1tf1GecYF0h5SADT6lOnOJCzMqTdrTF9lns2p-knZk2OslURvjqGHrUBr4hS8feQRZQfLfBaiIWpZBD99eH8JgsCy8XkgkE6Q1qrPv0ZlAyiRLnf3v-Fi3yT7CY-pW8xPVvrNHln/w400-h253/081+page+129a.jpg)
চিত্র 57: গুইনেভিয়ের প্ল্যানিটিয়া
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjZMCzMrHBT_maChhjJS1ILAyGRJTx3hixLYK3iSnb-tlr2IbkxrCrrr7am9Yikps16iS1FgD_3MQ9kRyKjSGGrBc83vtpUOD10KSz7P1_WAPzzYNyRK1bm8exoRHf5fP49cbJYng9juxau/w400-h253/082+page+129b.jpg)
চিত্র 58: নিওবি প্ল্যানেটিয়া
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiqjVVQ0kB6VU5FmxMqE7jbsHpkAqT9PhuddIEiJ6DxpS5JtDoLYFOGgs9ysh5qqnUAisvlAVrOURE0gx_HGZ-FYA_vvm1J-ZMj97pvTl9anMN5ILAAwry5-wsZIvLC3Xg8ZgIFHXLlk1i4/w400-h253/083+page+130a.jpg)
চিত্র 59: হেলেন প্ল্যানিটিয়া
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg2_o1Uy4GNoQlmrumc-oq4C3DTzS9U7ikSaVSAaOERxne9JGtJBJvHGeajddlALLcFLOWKMizD9Qf8-pfhAECy8VOkRA9dRKu_fB76bXKiaIChb9gmT8QRCM4pGP_hdudyhcC5s5jukibR/w400-h253/084+page+130b.jpg)
চিত্র 60: সেডনা প্ল্যানেটিয়া
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEijsn4i8qDfRtCNNBgKnZsygGtcxUey1ITRfrOSoFe4VspXlFih1qqFaMNjonb6fC3Jsc5idTJNds3Fe1NPik_1hAfSFn4rDib2l8R-p7pypkLlOdziaKAVBo492EY4VThLC5jNzoihBEjT/w400-h344/085+page+131a.jpg)
চিত্র 61: তাহমিনা প্ল্যানিটিয়া
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhOtzsMXdLaUI5GKiiZvtIE7r90wa6w3YkT7iqayYCTDt9nI_Y8GknOengcOAdPY_TCcLu4ghz-uxp8BxiMdopU8ZjbT_BNawrCL6F-AVfSn12BjU1iA3Cgz5Be3smIdcifavyuup12mKnZ/w400-h253/086+page+131b.jpg)
চিত্র 62: লাভিনিয়া প্ল্যানিটিয়া
শুক্রের ভূমি বিন্যাস
শুক্রের ভূমির বৈচিত্র্য আমাদের পৃথিবীর ভূমির তুলনায় অনেক কম। পৃথিবীর মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় 71% ভূমি দখল করে আছে পানি। শুক্রে কোন তরল পানি নেই। শুক্রের ভূমির পুরোটাই দখল করে আছে প্রাণহীন কঠিন পদার্থ। ভূমিতে বেশ কিছু পাহাড়পর্বত আছে - যাদের উচ্চতা আমাদের পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্টের চেয়েও বেশি। শুক্রের মোট ভূমির শতকরা আটভাগ পাহাড়ী অঞ্চল। শুক্রে আছে প্রচুর সুপ্ত অথবা মৃত আগ্নেয়গিরি।[3] আগ্নেয়গিরির ফলে সৃষ্টি নিচু সমতুল ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির 27%। বাকি 65% সমতল ভূমি। আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের প্রমাণ আছে প্রায় সবখানে। চলো
দেখা যাক শুক্রের কিছু প্রধান প্রধান পাহাড়, খাদ, গহ্বর, আগ্নেয়গিরির রূপ।
গহ্বর (Craters): শুক্রের ভূমিতে প্রায় 900 ছোট-বড় গহ্বরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সাধারণত বিভিন্ন গ্রহের পিঠের উপর
বিভিন্ন গ্রহাণুর আঘাতের ফলে এসব গহ্বরের সৃষ্টি হয়। শুক্রের ক্ষেত্রফল অনুযায়ী শুক্রে আরো অনেকবেশি
গহ্বরের চিহ্ন থাকার কথা। কিন্তু শুক্রের উপরিস্তরের প্রায় সবখানে লাভার আস্তরণ
থাকাতে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আগের গহ্বরগুলোর অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞানীরা
ধারণা করছেন বর্তমান গহ্বরগুলোর বয়স 500 মিলিয়ন বছর বা 50 কোটি বছরের বেশি নয়। সৌরজগতের
অন্যান্য গ্রহগুলোর ভূমির স্তরের বয়সের তুলনায় এই 50 কোটি বছর খুবই কম। তার মানে দাঁড়ায় শুক্র গ্রহের বড় ধরনের বিবর্তন হয়েছে 50 কোটি বছর আগে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi4j47CbQ3FsKeUXU3kIz5nHsVHpGD_AISu0YeZSw9Lm7F5cGUZzF98Vw5VcCm0o6XZnwMaQU4mO7aowbsQyXOVN35kVHku6-DUIuRgH1gO3bknD5AMRP1tz683m4ZmuL8DQ4STtLuZ4Iv-/w384-h400/088+page+133.gif)
চিত্র 63: মিড গহ্বর - শুক্র গ্রহের সবচেয়ে বড় গহ্বর
শুক্রের বড় বড় গহ্বরগুলোর আকৃতি প্রায় একই রকম সরল হলেও ছোট গহ্বরগুলোর
আকৃতি বেশ জটিল। ধারণা করা হচ্ছে শুক্র গ্রহের পুরু বায়ুমন্ডল ভেদ করে আসার সময়
গ্রহাণুগুলো ভেঙেচুরে বিকৃত আকার ধারণ করে ভূমিতে আঘাত করার ফলেই বিচিত্র জটিল
আকৃতির ছোট ছোট গহ্বরগুলো সৃষ্টি হয়েছে। শুক্র গ্রহের সবচেয়ে বড় গহ্বরের নাম মিড (Mead)।
আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী (anthropologist) মার্গারিট মিডের নামে এই গহ্বরের নাম দেয়া হয়েছে। এর গড় ব্যাস ২৮০
কিলোমিটার।
পর্বতমালা
(Montes): শুক্র গ্রহে ছোট বড় 122টি পর্বতের (mons) অবস্থান
চিহ্নিত করা হয়েছে। শুক্র গ্রহের সবচেয়ে বড় দুটো পর্বতের নাম আটানুয়া (Atanua) ও ভার (Var) এদের গড় ব্যাস প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। তবে
সবচেয়ে উঁচু পর্বতের নাম ম্যাক্সওয়েল। পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ম্যাক্সওয়েলের নামে
রাখা হয়েছে এই পর্বতের নাম। এর উচ্চতা প্রায় এগার কিলোমিটার, যা পৃথিবীর
এভারেস্টের চেয়েও অনেক বেশি।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhxnKdUoVDWXMQtANe6WCYfHj7DEgGxzlx-mgCz4Sg4aLKajy0PjrMEnLyt2oADbUAhstqLck4YC0W4lf9Vxz46yc8XdhKGMQHVp3EFgPLN-IKdtcw4hQrmgEsMicgpsZgNvU8pYWuJVxwq/w400-h319/089+page+134.jpg)
চিত্র
64: ম্যাক্সওয়েল পর্বতশৃঙ্গ
মালভূমি (planum): শুক্র গ্রহের বিশাল দুটো
মালভূমির নাম আফ্রোদিতি ও ইশতার। এগুলোকে টেরাও বলা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় মালভূমি
ইশতার টেরা পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত। আকারে পুরো আমেরিকার চেয়েও বড়।
ইশতার টেরায় ম্যাক্সওয়েল পর্বতমালা ঘেঁষে আছে লক্ষ্মী মালভূমি (Lakshmi Planum)। লক্ষ্মী মালভূমির উচ্চতাও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। আকারে পৃথিবীর তিব্বতের সমান।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjx_ztwODIty1p7XtWtQ6AxIJHLwa_TZvEBTK3QUmBLosUsQxXokYTQnfueEI6ikZLAX1mEXGDTOIzV8YqlRVE9IVusJ0bLD3breudN7MIU0UHifDOAZS2xWiGt3E5dI08Su0r3a4d-oKGM/w400-h400/090+page+135.gif)
চিত্র 65: লক্ষ্মী মালভূমি
আগ্নেয়গিরি (volcanoes): শুক্রের সমস্ত পিঠজুড়ে রয়েছে হাজার খানেক আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। এগুলোর বেশিরভাগই এখন মৃত। কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ কোটি বছর আগেও এখান থেকে যে লাভা বের হয়েছে তার প্রমাণ আছে শুক্রের সবখানে। প্রায় 170টি বড় আগ্নেয়গিরি আছে শুক্রে যাদের উচ্চতা প্রায় চার কিলোমিটার এবং বিস্তৃতি কয়েক শ কিলোমিটার। প্রায় হাজার খানেক ছোট ছোট আগ্নেয়গিরির আছে যাদের আকৃতি বিচিত্র ধরনের। দূর থেকে দেখতে কোন কোনটাকে লাগে প্যানকেকের মত, আবার কোন কোনটাকে লাগে মাকড়শার মতো।
শুক্র গ্রহের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরির নাম রাখা হয়েছে মিশরের সত্য ও ন্যায়ের দেবী মাটের (Ma'at) নামে।
আগ্নেয়গিরি
থেকে সৃষ্ট এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় আট কিলোমিটার।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh73LuFjjcsyAatFHnz13YUW5xsK-21hkFjVBLpTTJW4wfXx-pZ69hoAIuUl411BrNUHYdatDftmmJbwp3WucfvYfmzVl1pXoQKx9pz3ER7GFN6DPcTKizquwXgvFqSdPMOF2XIubWOOQPY/w400-h315/091+page+136a.jpg)
চিত্র 66: মাট
মন্স (Maat Mons) শুক্রের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4RnXJmhc0PX58rWxA3E35lbatRZfy0ugw6NnIOJ5VGAbQ5Sf1dVmt7RHvmi9sW0qZQIIJ8Ua32e6LgeB_f1ykuqFcqY48JJ4dwcIGUExESBObXZucvbmlrUpQOqWskM58zJ_yOaAbRqNX/w400-h228/092+page+136b.jpg)
চিত্র 67:
প্যানকেক ডোম্স
শুক্রের আলফা রেজিও অঞ্চলে দেখা গেছে অনেকগুলো ছোট ছোট আগ্নেয়গিরি যাদের গড় ব্যাস প্রায় বিশ কিলোমিটার এবং উচ্চতা প্রায় 750 মিটার। এসব ছোট ছোট পাহাড়ের চারপাশ খুব খাড়া এবং উপরটা
খুব সমতল বলে এগুলোকে দেখতে অনেকটা প্যানকেকের মতো লাগে। তাই এগুলোর নাম প্যানকেক
ডোমস (Pancake domes)।
আবার কতগুলো আগ্নেয়গিরির ঢালু পথ
এমনভাবে খাঁজকাটা এবং এবড়োখেবড়ো যে দেখতে মাকড়শার পায়ের মত লাগে। এগুলোকে বলে
অ্যারাকনয়েডস (Arachnoids)। এগুলো প্রায় 200 কিলোমিটার পর্যন্ত
বিস্তৃত হতে পারে। শুক্র গ্রহে এ ধরনের প্রায় নব্বইটি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পাওয়া
গেছে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgBP1UiVfJzma8NU5MBMMaAwwpJg-mN8qm73VdkbK4TDM6Tzf_qy6enD0yr2F5YsgqwL0jeyne5Pk8LSQOLbeS5SmNy0Dr-qOT9P2-C-UYY1jiOisXRQUMVxZ5bW926TZTG_LfK5hlubUb7/w400-h290/093+page+137.png)
চিত্র 68: অ্যারাকনয়েডস
আগ্নেয়গিরি
শুক্রের আগ্নেয়গিরি
কি জীবন্ত? এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দুটোই হতে পারে। শুক্র গ্রহের বাতাসে
সালফার ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার অর্থ হচ্ছে আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গমন হচ্ছে।
শুক্রের আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে কোন কোনটা এখনো জীবন্ত হলেও হতে পারে।
[1] এই সবগুলো
জায়গার পূর্ণ বিবরণ আছে এই ওয়েবসাইটে: https://planetarynames.wr.usgs.gov/Page/VENUS/target
[2] বেলারুশ, রাশিয়া, ইউক্রেন, চেক, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ইত্যাদি
[3] কোন গ্রহে আগ্নেয়গিরি কীভাবে উৎপন্ন হয় তা আমরা পৃথিবী
গ্রহ সম্পর্কে আলোচনা করার সময় বিস্তারিত বলেছি। দেখো প্রদীপ দেবের 'পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ', মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৬, পৃষ্ঠা: ৭২।
No comments:
Post a Comment