শুক্রে অভিযান ১২ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
জন্ড 1 (Zond 1) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
02/04/1964 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে যাওয়া |
যাওয়ার পথে
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিশন ব্যর্থ। |
চিত্র 23:
জন্ড-1
বেশ
কয়েকটা মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন আরো উন্নত মানের মহাকাশযান তৈরি করে।
জন্ড-1 ছিল সেই উন্নত প্রযুক্তির মহাকাশ যানের প্রথমটি। শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে
উড়ে যাবার উদ্দেশ্যে এটাকে উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৬৪ সালের ২রা এপ্রিল। ৮৯০ কিলোগ্রাম
ভরের এই স্যাটেলাইটটি শুক্র গ্রহের এক লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে পৌঁছায় ১৯৬৪
সালের ১৯ জুলাই। সেটা জানা গেছে বৈজ্ঞানিক হিসেব নিকেশ থেকে। কিন্তু মূল
স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার প্রায় এক মাস আগে। ২৪ মে'র পর
পৃথিবীর সাথে আর কোন যোগাযোগ নেই জন্ড-১ মহাকাশযানের। সে হিসেবে শুক্র গ্রহ
সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি এই মিশন থেকে। বলা চলে মিশনটি ব্যর্থ।
শুক্রে অভিযান ১৩ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 2 (Venera 2) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
12/11/1965 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
শুক্র গ্রহের
কাছে যাওয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। |
শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে ভেনেরা-২ নভোযানটি পাঠানো হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ১২ নভেম্বর। ৯৬৩ কিলোগ্রাম ভরের এই যানটি টেলিভিশন প্রযুক্তি সাথে নিয়ে গিয়েছিল। শুক্র গ্রহের চব্বিশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছার পর কক্ষচ্যুত হয়। শুক্র গ্রহে পৌঁছানোর আগেই এর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। ফলে কোন তথ্য পাঠাতে পারেনি এটা। তাই এটাকেও একটা ব্যর্থ মিশন বলতে হয়।
শুক্রে অভিযান ১৪ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 3 (Venera 3) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
16/11/1965 |
শুক্র গ্রহের
ভূমিতে নামা |
শুক্র গ্রহে
পৌঁছানোর পর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। |
শুক্র গ্রহে অভিযানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যর্থ মিশন থাকলেও সোভিয়েত
ইউনিয়নের ভেনেরা মিশন অনেক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটিয়েছে। ভেনেরা-৩ নভোযানটি হলো
পৃথিবীর প্রথম স্যাটেলাইট যেটা পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহে গিয়ে পৌঁছেছে। শুক্র
গ্রহে অবতরণ করানোর উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছিল ভেনেরা-৩। বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা,
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, জ্বালানি তৈরির সোলার প্যানেল ইত্যাদি সবকিছুসহ ভেনেরা-৩
পৃথিবী থেকে রওনা দেয় ১৯৬৫ সালের ১১ নভেম্বর। তারপর শুক্র গ্রহে গিয়ে আছড়ে পড়ে
১৯৬৬ সালের ১লা মার্চ। কিন্তু তার দুসপ্তাহ আগেই তার সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ বন্ধ
হয়ে গিয়েছিল। তাই ভেনেরা-৩ শুক্রে পৌঁছলেও সেখান থেকে কোন তথ্য আমাদের পাঠাতে
পারেনি। তারপরও মিশনটিকে একটি সফল মিশন হিসেবে ধরতে হবে। কারণ প্রথমবারের মত
পৃথিবীতে নির্মিত কোন বস্তু অন্য কোন গ্রহে গিয়ে পড়েছিল তা হলো এই ভেনেরা-৩।
চিত্র 24: ভেনেরা-3
শুক্রে অভিযান ১৫ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
কসমস 96 (Cosmos96) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
23/11/1965 |
শুক্র গ্রহের
ভূমিতেএকটি নামা |
উৎক্ষেপণের পর
বিস্ফোরণ ঘটে। মিশন ব্যর্থ হয়। |
ভেনেরা-৩
মিশনের মতোই শুক্র গ্রহে অবতরণ করানোর উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল কসমস-96 ১৯৬৫ সালের ১৩ নভেম্বর। কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথে কিছুদিন ঘুরার পর
সেখান থেকে শুক্রের কক্ষপথের দিকে যাত্রা
করার সময় নভোযানে বিস্ফোরণ ঘটে। মহাকাশে এই বিস্ফোরণের আগুন এত তীব্র ছিল যে
কানাডা ও আমেরিকার অনেকগুলো রাজ্য থেকে তা দেখা গিয়েছিল ৯ ডিসেম্বর ১৯৬৫। এই মিশনও
ব্যর্থ মিশন।
শুক্রে অভিযান ১৬ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 1965A (Venera 1965A) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
26/11/1965 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে যাওয়া |
উৎক্ষেপণ ব্যর্থ
হয়। |
ভেনেরা-৩
মিশনের মতোই আরো একটি মিশন ভেনেরা-1965A চেষ্টা করা হয়েছিল কসমস-96 উৎক্ষেপণের তিন
দিন পর ২৬ নভেম্বর ১৯৬৫। নভোযানের কারিগরী ও বৈজ্ঞানিক প্রস্তুতি ভালো থাকা
সত্ত্বেও উৎক্ষেপণে ত্রুটির কারণে ভেনেরা-1965A উৎক্ষেপণ
করা যায়নি। শুক্রগ্রহে অভিযানের ব্যর্থ প্রকল্পে আরো একটি নাম যোগ হলো।
একটা মিশন ব্যর্থ হবার পর পরবর্তী মিশন
আরো ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের শুক্রে অভিযানের
মিশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফলতার মুখ দেখেছে ভেনেরা-4। ভেনেরা-4 এর উদ্দেশ্য ছিল শুক্র গ্রহে
অবতরণ করে সেখানকার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা। এই মিশনটি খুবই সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন
হয়। ভেনেরা-4 নভোযান শুক্র গ্রহ থেকে সরাসরি তথ্য ও উপাত্ত
পাঠায় পৃথিবীতে।
শুক্রে অভিযান ১৭ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 4 (Venera 4) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
12/06/1967 |
তথ্য সংগ্রাহক
যন্ত্র নিয়ে শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র
25: ভেনেরা-4
ভেনেরা-4 নভোযানের মোট ভর ছিল ১১০৬ কিলোগ্রাম। এর মূল অংশের উচ্চতা সাড়ে তিন মিটার।
এর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহে নামার জন্য স্বয়ংক্রিয় চাপ নিয়ন্ত্রিত আরেকটি যান যার ভর
৩৮৩ কিলোগ্রাম। এই ছোট যানটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যেন প্রচন্ড তাপ, চাপ, কিংবা
গতিতেও এর কোন ক্ষতি না হয়। আড়াই বর্গ মিটারের সোলার প্যানেল মহাকাশে গিয়ে
পুরোপুরি খোলার পর চার মিটার লম্বা প্যানেলে পরিণত হয়। সৌরশক্তি থেকে জ্বালানি
সংগ্রহের কাজে এই প্যানেল ব্যবহৃত হয়। এই যানে ছিল দুটো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন
থার্মোমিটার, চাপ মাপার জন্য ব্যারোমিটার, উচ্চতা মাপার জন্য রেডিও-অ্যাল্টিমিটার,
বাতাসের ঘনত্ব মাপার যন্ত্র, গ্যাসের উপাদান বিশ্লেষণ করার যন্ত্র এবং শক্তিশালী
ট্রান্সমিটার। মূল যানে ছিল চুম্বকত্ব মাপার জন্য ম্যাগনেটোমিটার, মহাজাগতিক
বিকিরণ মাপার জন্য কসমিক রে ডিটেক্টর, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এবং অন্যান্য চার্জিত
কণার উপস্থিতি নিরূপণ করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
১৯৬৭ সালের ১২ জুন উৎক্ষেপণ করা হয়
ভেনেরা-4। ১৯৬৭ সালের ১৮ অক্টোবর শুক্র গ্রহের
বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে ভেনেরা। বিজ্ঞানীরা চিন্তাই করতে পারেননি যে শুক্র গ্রহের
বায়মন্ডলের চাপ অত বেশি হবে। নভোযানটি গতি কমিয়ে ঘন্টায় ১০৩২ কিলোমিটার বেগে শুক্রের
বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। শুক্রের ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৫২ কিলোমিটার উচ্চতায় ভেনেরার প্যারাসুট
খুলে যায়। মূল যান থেকে ছোট যানটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার ৫ মিনিট আগে থেকেই
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি চালু হয়ে গিয়েছিল। শুক্র গ্রহের প্রচন্ড তাপ ও চাপেও এই
যন্ত্রপাতিগুলো প্রায় দেড় ঘন্টা (৯৩
মিনিট) সচল ছিল। এই দেড় ঘন্টায় ২৩ ধরনের উপাত্ত মেপেছে এই যন্ত্রগুলো। শুক্রের
ভূমি থেকে ৫৫ কিলোমিটার উঁচুতে থাকতে যন্ত্রপাতিগুলো চালু হয়েছিল। তারপর দেড় ঘন্টা
ধরে নামতে নামতে ভূমি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উঁচুতে এসে সবগুলো যন্ত্রপাতি অচল
হয়ে যায়। যন্ত্রগুলো অচল হয়ে যাবার আগেই সবগুলো তথ্য পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়। সেখান
থেকে দেখা গেছে সেই উচ্চতায় শুক্রের বায়ুর চাপ পৃথিবীর বায়ুর চাপের ২২ গুণ, আর
তাপমাত্রা ছিল ২৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর নিশ্চল যানটি পড়ে যায় শুক্রের ভূমিতে।
ভেনেরা-4 এর পাঠানো পরিমাপ থেকে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন শুক্রের বায়ুমন্ডলের
উপাদানের মধ্যে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড। কোন ধরনের চৌম্বক
ক্ষেত্রের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। শুক্র গ্রহের অভিযানে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেনেরা-4 ছিল অত্যন্ত সফল একটি মিশন।
শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আরো জানার জন্য আরো
মিশনের প্রস্তুতি চলতে থাকে। ভেনেরা-4 উৎক্ষেপণের
দু'দিন পরেই আমেরিকান মিশন ম্যারিনার-5 উৎক্ষেপণ করা হয়
শুক্রের উদ্দেশে।
শুক্রে অভিযান ১৮ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও ফলাফল |
ম্যারিনার 5 (Mariner 5) |
আমেরিকা |
14/06/1967 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 26: ম্যারিনার-5
সোভিয়েত
ইউনিয়নিয়নের ভেনেরা-4 উৎক্ষেপণের দু'দিন পর আমেরিকান
ম্যারিনার-5 নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয়। ম্যারিনার-5 এর লক্ষ্য ছিল শুক্র গ্রহের দুই হাজার কিলোমিটারের ভেতর দিয়ে উড়ে যাওয়ার
সময় গ্রহটির বায়ুমন্ডলের গঠন, বিকিরণ ও চৌম্বকক্ষেত্রের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা।
এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহের কাছাকাছি আসার সময় বা দূরে চলে যাবার সময় গ্রহের
পরিবেশের কোন পরিবর্তন হয় কি না তাও পরীক্ষা করে দেখেছে ম্যারিনার-5।
ম্যারিনার-5 এর মূল কাঠামোর গঠন ছিল অষ্টভূজাকৃতির। চারটি সোলার প্যানেল লাগানো ছিল
তার সাথে। উপরে ছিল প্রায় ১১৭ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি বড় শক্তিশালী অ্যান্টেনা।
২৮৯ সেন্টিমিটার লম্বা এই নভোযানটিতে ছিল প্রয়োজনীয় সব বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। ১৯৬৭
সালের ১৪ জুন পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করে ১৯শে অক্টোবর শুক্র গ্রহের কাছাকাছি
গিয়ে পৌঁছে ম্যারিনার-5 এবং সেখান থেকে সিগনাল পাঠাতে
থাকে। শুক্র গ্রহের প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যায় ম্যারিনার-5। ১৯৬৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ম্যারিনার-5 এর সাথে পৃথিবীর
যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার আগে যতগুলো ডাটা পাঠিয়েছে তাতে শুক্র গ্রহের
চৌম্বকক্ষেত্র, চার্জিত কণার বিকিরণ, অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ ইত্যাদি সম্পর্কে
অনেক নতুন তথ্য জানা যায়।
শুক্রে অভিযান ১৯ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
কসমস 167 (Cosmos167) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
17/06/1967 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। |
উৎক্ষেপণের পর
ফাইনাল রকেট স্টেজ ব্যর্থ হয়। |
সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যর্থ মিশনগুলোর নাম দেয়া হয়েছিল কসমস। কসমস-167 মূলত ছিল ভেনেরা-4 এর মতোই শুক্র গ্রহে যাওয়ার মিশন। ভেনেরা-4 উৎক্ষেপণের মাত্র ৫ দিন পরেই এটা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু কারিগরী সমস্যায় এটা পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে যেতে পারেনি। মিশন ব্যর্থ হয়।
শুক্রে অভিযান ২০ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 5 (Venera 5) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
05/01/1969 |
তথ্য সংগ্রাহক
যন্ত্র নিয়ে শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া |
মিশন সফল হয়। |
শুক্রে অভিযান ২১ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 6 (Venera 6) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
10/01/1969 |
তথ্য সংগ্রাহক
যন্ত্র নিয়ে শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 27: ভেনেরা-5,6
১৯৬৯
সালের জানুয়ারি মাসে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটো ভেনেরা নভোযান উৎক্ষেপণ করে
সোভিয়েত ইউনিয়ন। ভেনেরা-5 ও ভেনেরা-6
নভোযান দুটোর গঠন হুবহু একই রকম। ভেনেরা-4 শুক্র গ্রহ সম্পর্কে যেসব তথ্য পাঠিয়েছিল সেগুলোকে আরো ভালভাবে পরীক্ষা
করে দেখাই ছিল এই মিশন দুটোর লক্ষ্য। ভেনেরা-4 শুক্র
গ্রহের পিঠে নেমে আসার সময় ভূমি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরেই বৈজ্ঞানিক
যন্ত্রপাতিগুলো অচল হয়ে গিয়েছিল শুক্র গ্রহের প্রচন্ড চাপ ও তাপ সহ্য করতে না
পেরে। তাই এবার যন্ত্রপাতিগুলোকে তৈরি করা হয়েছে আরো শক্তিশালী করে। দ্রুত নেমে
আসার সুবিধার জন্য ১১৩০ কিলোগ্রাম ভরের নভোযানে আছে ৪০৫ কিলোগ্রাম ভরের একটি
গোলাকার ভর। গতি কমানোর জন্য প্যারাসুটগুলো করা হয়েছে আগের চেয়েও ছোট - ১৫ বর্গ
মিটার। প্যারাসুট খুলতে শুরু করার সাথে সাথেই যেন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলো চালু
হয়ে যায় সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ভেনেরা-5 উৎক্ষেপণ করা হয়। ১৬ মে শুক্র গ্রহের কাছাকাছি পৌঁছার পর মূল কাঠামো থেকে
শুক্রে নামার অংশটি আলাদা হয়ে যায়। শুক্রের পৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব তখন মাত্র ৩৭ হাজার
কিলোমিটার। প্যারাসুট খুলে যায়, গতি কমে যায় নভোযানের। পৃথিবীতে ডাটা পাঠাতে শুরু
করে ভেনেরা-5। ৪৫ সেকেন্ড পর পর ডাটা পাঠাতে থাকে। এভাবে দ্রুত নামতে থাকে শুক্র গ্রহের
বায়ুমন্ডলের ভেতর দিয়ে। এভাবে ৫৩ মিনিট নামার পর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলো অচল হয়ে
যায়। শেষ মুহূর্তে সংগৃহীত তাপমাত্রা ছিল ৩২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের চাপ ছিল
পৃথিবীর ২৬ গুণ। আর শুক্র পৃষ্ঠ থেকে তখন উচ্চতা ছিল ২৪ থেকে ২৬ কিলোমিটার।
ফটোমিটারে আলোর উপস্থিতির হার ছিল প্রতি বর্গমিটারে ২৫০ ওয়াট।
ভেনেরা-6 পাঠানো হয় ভেনেরা-5 এর ৫ দিন পর ১৯৬৯ সালের ১০ জানুয়ারি। ১৭ মে এটা শুক্র গ্রহের ২৫ হাজার কিলোমিটারের ভেতর পৌঁছে যায়। প্যারাসুট খোলার পর ৫১ মিনিট ধরে প্রতি ৪৫ সেকেন্ড পর পর ডাটা পাঠায় ভেনেরা-6। শুক্রগ্রহের বায়ুমন্ডলের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার উঁচুতে তাপমাত্রা ও চাপ পরিমাপ করতে সক্ষম হয় ভেনেরা-6।
শুক্রে অভিযান ২২ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 7 (Venera 7) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
17/08/1970 |
তথ্য সংগ্রাহক
যন্ত্র নিয়ে শুক্র গ্রহে নামা। |
মিশন সফল হয়।
শুক্র গ্রহের ভূমি থেকে সরাসরি তথ্য পাঠায়। |
মহাকাশে অভিযানের আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে ভেনেরা-7 মিশনের মাধ্যমে। শুক্র গ্রহে মহাকাশযান নামিয়ে সেখান থেকে সরাসরি ডাটা সংগ্রহের কাজে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে ভেনেরা-4, 5, 6। এই তিনটি নভোযানই শুক্রে নেমেছে। কিন্তু শুক্রের পিঠে পৌঁছানোর আগেই তাদের যন্ত্রপাতিগুলো বিকল হয়ে গেছে শুক্রের প্রচন্ড তাপ ও চাপ এবং অসহ্য আবহাওয়ায়। শুক্র পৃষ্ঠের মাত্র বিশ পঁচিশ কিলোমিটার উপর থেকে পাওয়া তথ্যেও সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আরো দুটো ভেনেরা মিশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। ভেনেরা-7 হলো সেই দুটো মিশনের একটি।
যথাসম্ভব দ্রুত শুক্রের পৃষ্ঠে নেমে যাবার জন্য নভোযানের সাথে লাগানো গোলাকার ভরটিকে করলেন আরো ভারী - ৪৯০ কিলোগ্রাম। গতি কমানোর প্যারাসুটগুলোর আকার করলেন আরো ছোট (আড়াই বর্গ মিটার)। থার্মোমিটার আর ব্যারোমিটারগুলো যেন আরো তাপ ও চাপ সইতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হলো। সবকিছু ঠিক করে ভেনেরা-7 উৎক্ষেপণ করা হলো ১৯৭০ সালের ১৭ আগস্ট। ।
চিত্র 28: ভেনেরা-7 এর ভারী গোলাকার অংশ
সেটা শুক্র গ্রহে পৌঁছালো ১৫ ডিসেম্বর। শুক্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০ কিলোমিটার
উঁচুতে প্যারাসুট খুললো আর যন্ত্রপাতি শুক্রের পরিবেশ মাপতে শুরু করলো। পরবর্তী ২৯
মিনিটের মধ্যে শুক্রের ভূমিতে নেমে এলো ভেনেরা-7। ডাটা ট্রান্সমিশানের মান ছিল খুব দুর্বল। পরে বিশ্লেষণ করে অনুমান করা হয়
যে শুক্রযানটি শুক্রপৃষ্ঠে প্রচন্ড বেগে নামার পর ডিগবাজি খেয়ে একপাশে কাত হয়ে
পড়াতে আন্টেনার দিক পৃথিবীর দিক থেকে অন্যদিকে সরে যায়। ফলে পৃথিবীর আন্টেনায় যে
সিগনাল এসেছে সেগুলোর মান ভালো ছিল না। শুক্রপৃষ্ঠে নামার পর আরও ২৩ মিনিট
ট্রান্সমিশান সক্রিয় ছিল। শুক্র পৃষ্ঠে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৭৫ ডিগ্রি
সেলসিয়াস, আর বায়ুমন্ডলের চাপের পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৯২ বার[1] (bar)। অর্থাৎ শুক্রের বায়ুমন্ডলের চাপ পৃথিবীর
বায়ুমন্ডলের চাপের ৯২ গুণ।
শুক্রে অভিযান ২৩ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
কসমস 359 (Cosmos359) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
22/08/1970 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। |
উৎক্ষেপণের পর
ফাইনাল রকেট স্টেজ ব্যর্থ হয়। |
সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা পরিকল্পনা করেছিলেন ভেনেরা-7 এর মতো হুবহু আরেকটি নভোযান শুক্রগ্রহে পাঠাতে। ভেনেরা-7 এর উৎক্ষেপণের পাঁচ দিন পর ১৯৭০ সালের ২২ আগস্ট মহাকাশে পাঠানো হয় এই নভোযান। কিন্তু সেটা পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে শুক্রের কক্ষপথের দিকে যেতে পারেনি মহাকাশে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে। নিয়ম অনুসারে এই ব্যর্থ প্রকল্পটির নাম হয়ে যায় কসমস
359।
শুক্রে অভিযান ২৪ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনেরা 8 (Venera 8) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
27/03/1972 |
তথ্য সংগ্রাহক
যন্ত্র নিয়ে শুক্র গ্রহে নামা। |
মিশন সফল হয়।
শুক্র গ্রহের ভূমি থেকে সরাসরি তথ্য পাঠায়। |
ভেনেরা মিশনের আওতায় আরো দুটো নভোযান শুক্রে পাঠানোর ব্যবস্থা হয় ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে। ভেনেরা-8 উৎক্ষেপণ করা হয় ২৭ মার্চ। মূল উদ্দেশ্য হলো শুক্রের মাটিতে নেমে সেখানকার পরিবেশ এবং শুক্রের ধুলো-মাটির উপাদান পরীক্ষা করে দেখা। ভেনেরা-7 এর মতোই ছিল নভোযানের গঠন। ১১৮০ কিলোগ্রাম ভরের নভোযানটির নিচের অংশে গোলাকার অংশ যেটা শুক্রে নামবে তার ভর ছিল ৪৯৫ কিলোগ্রাম। সবগুলো বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আরো সূক্ষ্ম এবং ঘাতসহ করে তৈরি করা হয়েছে। আগের যন্ত্রপাতিগুলোর সাথে নতুন করে যোগ করে দেয়া হয়েছে গামা রে স্পেক্টোমিটার এবং বাতাসের বেগ মাপার জন্য অ্যানেমোমিটার (anemometer)। উৎক্ষেপণের প্রায় চারমাস পর ২২শে জুলাই শুক্রের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে ভেনেরা-8। শুক্রের মাটিতে ঠিকমত নামার পর ৬৩ মিনিট পর্যন্ত ডাটা পাঠিয়েছিল পৃথিবীতে। এই ডাটাগুলোর সাথে এর আগে ভেনেরা-7 এর পাঠানো ডাটাগুলোর মিল আছে। শুক্রের তাপমাত্রা 470 ডিগ্রি সেলসিয়াস। বায়ুমন্ডলের চাপ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের চাপের চেয়ে ৯০ গুণ বেশি। বায়ুমন্ডলে গ্যাসের মেঘে সালফিউরিক এসিডের অস্তিত্ব নির্দেশ করে ভেনেরা-8 এর ডাটা।
শুক্রে অভিযান ২৫ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
কসমস 482 (Cosmos482) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
31/03/1972 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। |
উৎক্ষেপণের পর
ফাইনাল রকেট স্টেজ ব্যর্থ হয়। |
ভেনেরা-8 এর হুবহু একই রকম আরেকটি ভেনেরা নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয় ৩১ মার্চ ১৯৭২। কিন্তু এই নভোযানটি পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বের হতে পারেনি। ফলে এর নাম হয়ে যায় কসমস-482।
[1] ১ বার = ১০০,০০০ প্যাসকেল। ১
বার হলো = 0.987 x সমুদ্রসমতলে পৃথিবীর
গড় বায়ুমন্ডলের চাপ। হিসেবের সুবিধার্থে ১ বার = পৃথিবীর গড় বায়ুমন্ডলের চাপ ধরে নেয়া হয়।
১০ পর্বে প্রচুর জ্ঞান আহরণ করলাম।
ReplyDeleteচট্টগ্রামে আসলে আপনার ছাত্র টিটু কুমার শিল এর বাসায় আসবেন, আপনার সাথে আমি দেখা করব,নিজে ঠিকানা দিলাম না, খুজে পাবেন না, আর আপনার ঠিকানায় হয়ত আমি যাইতে পারবনা😥
* আমি আপনার ছাত্রের ছাত্র🙂
FB: SimAntA SahA SaRoB
অনেক ধন্যবাদ সীমান্ত।
Deleteঅনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
ReplyDelete