শুক্র গ্রহে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ মিশনের নাম ছিল ভেগা (Vega)। দুটো একই ধরনের নভোযান ভেগা-1 ও ভেগা-2 তারা পাঠিয়েছিল শুক্রগ্রহের উদ্দেশ্যে। ভেগা প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুটো। শুক্র গ্রহের কাছ দিয়ে উড়ে গিয়ে শুক্রের অভিকর্ষ বল কাজে লাগিয়ে হ্যালির ধুমকেতু অতিক্রম করে আবার শুক্র গ্রহে গিয়ে
শুক্রের মাটিতে নামা। ১৯৮৬ সালে পৃথিবী ও শুক্রের পাশ দিয়ে গিয়েছিল হ্যালির
ধুমকেতু। এই ধুমকেতু সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য ভেগা মিশনকে কাজে লাগানো হয়েছিল।
শুক্রে অভিযান ৩৭ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেগা 1 (Vega 1) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
15/12/1984 |
হ্যালির ধুমকেতুর
পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে শুক্রে নামা |
মিশন সফল হয়। |
শুক্রে অভিযান ৩৮ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেগা 2 (Vega 2) |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
21/12/1984 |
হ্যালির ধুমকেতুর
পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে শুক্রে নামা |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 37: ভেগা 1/2
ভেগা-1
ও ভেগা-2 এর ডিজাইনে প্রাধান্য পেয়েছিল বড় বড় সোলার প্যানেল, উচ্চ ক্ষমতার ডিশ অ্যান্টেনা, এবং হ্যালির ধুমকেতুর দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে যাওয়ার যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এগুলোর সাথে আছে ছবি তোলার ব্যবস্থা, স্পেকট্রোমিটার, ম্যাগনেটোমিটার, প্লাজমা প্রোব। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলোর ভর ছিল ১২৫ কেজি।
১৯৮৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভেগা-1 উৎক্ষেপণ করা হয়। এর ছয় দিন পর ২১ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয় ভেগা-2। দুটো নভোযানই শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায় ১৯৮৫ সালের জুন মাসে। শুক্র গ্রহের অভিকর্ষ বল কাজে লাগিয়ে নভোযান দুটো চলে যায় হ্যালির ধুমকেতুর[1] দিকে। ১৯৮৬ সালের ৬ মার্চ হ্যালির ধুমকেতুর দশ হাজার কিলোমিটার কাছ দিয়ে উড়ে যায় ভেগা-1। তার তিন দিন পর হ্যালির ধুমকেতুর তিন হাজার কিলোমিটার কাছ দিয়ে উড়ে যায় ভেগা-2। হ্যালির ধুমকেতুর তথ্যগুলো সংগ্রহ করে ভেগা-1 ও ভেগা-2 আবার রওয়ানা দেয় শুক্র গ্রহের দিকে। এবার লক্ষ্য শুক্র গ্রহে নামা।
শুক্রের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার সময় যন্ত্রপাতিসহ একটি বড় বেলুন ছেড়ে দেয়া হয় নভোযান থেকে। সেই বেলুনটি শুক্র গ্রহের মেঘের স্তরের ভেতর দিয়ে প্রায় 50 কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যায়। 47 ঘন্টা সময় ধরে বেলুনটির সাথে সংযুক্ত যন্ত্রপাতি পৃথিবীতে ডাটা পাঠায়।
শুক্রের ভূমিতে নভোযানের যে অংশটি
নেমেছে সেগুলোর গঠন ছিল আগের ভেনেরা প্রোবগুলোর মতো। ভেগা প্রোব তাপ চাপ মাপার
সাথে সাথে অতিবেগুনি রশ্মির ধর্ম পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি এবং শুক্রের বায়ুমন্ডলে
পানির অণু আছে কি না দেখার জন্য সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি। শুক্র গ্রহে নামার পর প্রায়
দুই ঘন্টা সচল ছিল ভেগার যন্ত্রপাতি। এই দুই ঘন্টায় শুক্রের প্লাজমা ও ধুলিকণা
পরীক্ষা করা হয় এবং ডাটা পৃথিবীতে পাঠানো হয়।
১৯৮৪ সালের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন রাজনৈতিক
পটপরিবর্তনের কারণে শুক্রে আর কোন অভিযান চালায়নি। ১৯৮৪ সালের পরবর্তী পাঁচ বছর শুক্রগ্রহে
আর কোন নভোযান পাঠানো হয়নি। এরপর শুক্রগ্রহের চারপাশে ঘুরার জন্য পাঠানো হয়
আমেরিকান বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইট ম্যাগেলান (Magellan)।
শুক্রে অভিযান ৩৯ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ম্যাগেলান (Magellan) |
আমেরিকা |
04/05/1989 |
শুক্র গ্রহের
চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে তথ্য সংগ্রহ করা। |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 38: ম্যাগেলান
ম্যাগেলান
নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ৪ মে। ওটা শুক্রগ্রহের চারপাশে কক্ষপথে
পৌঁছেছিল ১৯৯০ সালের ১০ আগস্ট। ১৯৯৪ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পৃথিবীতে ডাটা
পাঠিয়েছে ম্যাগেলান। তারপর তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মহাকাশে মৃত
স্যাটেলাইট হিসেবে এখনো ঘুরছে ম্যাগেলান। ম্যাগেলানের মূল উদ্দেশ্য ছিল শুক্রের
চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে র্যাডারের সাহায্যে শুক্রের উপরিতল জরিপ করা। চার বছর ধরে
ঘুরতে ঘুরতে ম্যাগেলান শুক্রের ৯৮% জায়গা জরিপ করেছে এবং তার পাঠানো ডাটা থেকে
বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছে শুক্র গ্রহের সম্পূর্ণ ম্যাপ।
১৯৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯১
সালের ১৫ মে পর্যন্ত ম্যাগেলানের র্যাডার শুক্রকে জরিপ করে বাম দিক থেকে। ১৯৯১
সালের ১৫ মে থেকে ১৯৯২ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জরিপ করে ডান দিক থেকে। ১৫
জানুয়ারি ১৯৯২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ পর্যন্ত জরিপ করে আবার বাম দিক থেকে। ১৯৯২
সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৩ সালের ২৪ মে পর্যন্ত শুক্রের অভিকর্ষ বল সংক্রান্ত
ডাটা সংগ্রহ করে। ২৪ মে তারিখে কক্ষপথে ম্যাগেলানের গতি কমানো হয়। ৩ আগস্ট থেকে
আবার অভিকর্ষ ডাটা সংগ্রহ করা হয়। ১৯৯২ সালের ১২ অক্টোবর পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুক্রগ্রহের ভূমির প্রকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসহ প্রচুর রঙিন
ছবি আমরা পেয়েছি ম্যাগেলানের মাধ্যমে।
চিত্র 39: ম্যাগেলানের
পাঠানো জরিপ থেকে শুক্রের ম্যাপ
ম্যাগেলানের পাঠানো ডাটা বিশ্লেষণ করে আজ আমরা জানি শুক্র গ্রহের ৮৫% ক্ষেত্রফল জুড়ে আছে আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া লাভা। আর বাকি ১৫% ভূমিতে আছে পাহাড়। প্রায় পৃথিবীর সমান আয়তনের গ্রহ হলেও শুক্র গ্রহে পৃথিবীর মতো কোন টেকটোনিক প্লেট নেই। অর্থাৎ পুরো গ্রহটির ভূমি পরস্পরের সাথে লাগানো। প্রচন্ড তাপ (475 ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও প্রচন্ড চাপ (92 বার) থাকা সত্ত্বেও ভূমিক্ষয় নগণ্য। কারণ ভূমিক্ষয়ের মূল উপাদান পানি নেই শুক্রগ্রহে। শুক্র গ্রহের ভূমির উপরের স্তরের বয়স 500 মিলিয়ন বছর বা 50 কোটি বছর।
চিত্র 40: শুক্রের
ভূমি
শুক্রে অভিযান ৪০ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
গ্যালিলিও (Galileo) |
আমেরিকা |
18/10/1989 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে গিয়ে বৃহস্পতি গ্রহের চারপাশে ঘুরা। |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 41: নভোযান গ্যালিলিও
আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসার গ্যালিলিও মিশন ছিল বৃহস্পতি গ্রহের চারপাশে ঘুরার মিশন। কিন্তু বৃহস্পতি গ্রহে যাওয়ার জন্য গ্যালিলিও নভোযান পৃথিবী ও শুক্রের অভিকর্ষ বলকে কাজে লাগিয়েছে। গ্যালিলিওর গতিপথকে বলা হয় VEEGA (Venus-Earth-Earth Gravity Assist)। শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুক্রের অভিকর্ষ বল থেকে গতি লাভ করার পাশাপাশি শুক্রের বেশ কিছু ছবিও তুলেছে। গ্যালিলিও নভোযানের তোলা শুক্রের মেঘের ছবি থেকেও বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন শুক্র সম্পর্কে। গ্যালিলিও মিশন সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে বলার সময়।
চিত্র 42: নভোযান গ্যালিলিও থেকে তোলা শুক্র গ্রহের মেঘের
ছবি
শুক্রে অভিযান ৪১ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ক্যাসিনি (Cassini) |
আমেরিকা |
15/10/1997 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে উড়ে গিয়ে শনি গ্রহের চারপাশে ঘুরা। |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 43: নভোযান ক্যাসিনি
গ্যালিলিও মিশনের আট বছর পর শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায় শনি গ্রহের মিশন ক্যাসিনি (Cassini)। ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর উৎক্ষেপণ করা হয় ক্যাসিনি নভোযান। শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে শুক্র গ্রহের অভিকর্ষ বলকে কাজে লাগিয়ে বেগ বাড়িয়ে তারপর যাবে শনি গ্রহের দিকে। এর গতিপথকে বলা হয় VVEJGA
(Venus-Venus-Earth-jupiter Gravity Assist)। শুক্রের পাশ দিয়ে একবার গিয়ে আবার ফিরে এসে পৃথিবীর পাশ দিয়ে গিয়ে চলে গেছে বৃহস্পতির দিকে। সেখান থেকে বৃহস্পতির কাছ থেকে অভিকর্ষ বল নিয়ে চলে গেছে শনির দিকে। ক্যাসিনি সম্পর্কেও আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো শনি গ্রহ সম্পর্কে বলার সময়।
ক্যাসিনির পর শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে যে
নভোযানটি গেছে সেটা ছিলো ম্যাসেঞ্জার (MESSENGER)। ম্যাসেঞ্জার ছিল বুধ গ্রহের মিশন।
শুক্রে অভিযান ৪২ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ম্যাসেঞ্জার (MESSENGER) |
আমেরিকা |
03/08/2004 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে দু'বার উড়ে গিয়ে বুধ গ্রহের চারপাশে ঘুরা। |
মিশন সফল হয়। |
চিত্র 44: নভোযান ম্যাসেঞ্জার
ম্যাসেঞ্জার
মিশন সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি বুধ গ্রহ সম্পর্কে বলার সময়।[2]
শুক্রে অভিযান ৪৩ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
ভেনাস এক্সপ্রেস (Venus Expresss) |
ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন |
09/11/2005 |
শুক্র গ্রহের চার
পাশে ঘুরা |
মিশন সফল হয়। |
শুক্র গ্রহের সাম্প্রতিক মিশন হলো ইওরোপিয়ান ইউনিয়নের মহাকাশ সংস্থার মিশন
ভেনাস এক্সপ্রেস। ২০০৫ সালের ৯ নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয় স্যাটেলাইট ভেনাস
এক্সপ্রেস। মূল লক্ষ্য শুক্র গ্রহের চারপাশে ঘুরতে শুরতে শুক্রের বায়ুমন্ডল ও
প্লাজমার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা। সৌরঝড় ও শুক্রের বায়ুমন্ডলের সাথে কী সম্পর্ক
সেটা খুঁজে বের করাও ছিল এই মিশনের অন্যতম লক্ষ্য। শুক্র গ্রহের বিষাক্ত পরিবেশ
তৈরিতে গ্রিনহাউজ এফেক্ট কী ভূমিকা রেখেছে, বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরের ঘূর্ণনের
রহস্য কী, শুক্র গ্রহের চৌম্বকত্বের পরিমাণ নগণ্য হওয়ার কারণ কী - ইত্যাদি প্রশ্নের
উত্তর খোঁজার লক্ষ্যে কাজ করেছে ভেনাস এক্সপ্রেস।
চিত্র 45: ভেনাস এক্সপ্রেস
উৎক্ষেপণের সময় ভেনাস এক্সপ্রেস নভোযানের ভর ছিল 1240 কেজি। যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ওজন ছিল 93 কেজি এবং জ্বালানি ছিল 570 কেজি। প্রধান অংশের আকৃতি ছিল 1.65
X 1.7 X 1.4 মিটার আয়তনের একটি বাক্সের মত। মোট চারটি অ্যান্টেনা ছিল এই নভোযানে।
২০০৫ সালের ৯ নভেম্বর উৎক্ষেপণের পর রকেট সরাসরি শুক্রের ট্রান্সফার অরবিট বা যেই কক্ষপথ থেকে শুক্র গ্রহের দিকে রওনা হবে সেই কক্ষপথে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে শুক্রে যেতে ভেনাস এক্সপ্রেসের লেগেছে ১৫৩ দিন। প্রায় চল্লিশ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে শুক্রে পৌঁছতে। ২০০৬ সালের ১১ এপ্রিল যে কক্ষপথে থেকে শুক্রের চারপাশে ঘুরবে সেই কক্ষপথে প্রবেশ করে নভোযান। কক্ষপথ এডজাস্ট করতে সময় লাগে কিছুদিন। ২০০৬ সালের ৪ জুন থেকে শুরু হয় মূল কাজ। শুক্র গ্রহের চার পাশে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালাতে থাকে। ২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট বছর শুক্র গ্রহের চারপাশে ঘুরে উপাত্ত (data) সংগ্রহ করেছে ভেনাস এক্সপ্রেস। তারপর তার সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভেনাস এক্সপ্রেস মিশনে খরচ হয়েছে প্রায় ২২০ মিলিয়ন ইউরো, আমাদের টাকায় যার পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।
চিত্র 46: ভেনাস এক্সপ্রেস থেকে আলট্রাভায়োলেট ও ইনফ্রারেড
ক্যামেরায় তোলা দুটো ছবির সমন্বয়ে শুক্র গ্রহ
শুক্র
গ্রহের চারপাশে এখনো যে স্যাটেলাইটটি ঘুরে ঘুরে শুক্র গ্রহের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ
করছে তার নাম আকাৎসুকি। জাপানি ভাষায় আকাৎসুকি শব্দের অর্থ ভোর। শুক্রের চারপাশে
ঘুরতে ঘুরতে শুক্র গ্রহের আবহাওয়ামন্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলোর সব খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে
দেখার জন্য জাপান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আকাৎসুকি মিশন হাতে নেয়। বিশেষভাবে আবহাওয়া
ও জলবায়ুর উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে এই প্রজেক্টের নাম দেয়া হয় প্ল্যানেট সি (Planet-C) প্রজেক্ট। আর এই প্রজেক্টের নভোযান বা স্যাটেলাইটের নাম হয় ভেনাস
ক্লাইমেট অরবিটার।
শুক্রে অভিযান ৪৪ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
আকাৎসুকি (Akatsuki) |
জাপান |
20/05/2010 |
শুক্র গ্রহের চার
পাশে ঘুরে শুক্রের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা। |
২০১০ সালে শুক্রের
চারপাশে ঘুরার জন্য কক্ষপথে ঢুকতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০১৫ সালে সফল হয়। |
চিত্র 47: ভেনাস ক্লাইমেট অরবিটার - আকাৎসুকি
২০১০ সালের ২১ মে জাপান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় আকাৎসুকি। এই নভোযানে মূল কাঠামোর 1.5 X 1.0 X 1.4 মিটার আয়তনের একটি আয়তাকার বাক্সের মত। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিসহ এর ভর ৫০০ কেজি। দুটো সোলার প্যানেলের প্রতিটি 5.1 মিটার লম্বা। একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক
যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে আছে হাই রেজ্যুলেশান ইনফ্রারেড ক্যামেরা, আলট্রাভায়োলেট
ক্যামেরা, আলট্রা-স্ট্যাবল অসসিলেটর ইত্যাদি। উড্ডয়নের পর পৃথিবীর কক্ষপথে কয়েকবার
ঘুরে ভেনাস ট্রানজিট অরবিটে ঢুকে শুক্রের দিকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু
যান্ত্রিক সমস্যার কারণে নভোযানটি ট্রানজিট অরবিটে ঢুকতে না পেরে পাঁচ বছর ধরে
পৃথিবীর কক্ষপথে সূর্যের চারপাশে ঘুরেছে। তারপর ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর এটাকে
আরেকটি বিকল্প কক্ষপথে শুক্রের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শুক্রের চারপাশে একটি
কক্ষপথে এই স্যাটেলাইটটি এখন প্রতি ১১ দিনে শুক্রকে একবার প্রদক্ষিণ করছে। আকাৎসুকি
পাঁচটি শক্তিশালী ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে।
শুক্রে অভিযান ৪৫ |
|||
মিশন/ মহাকাশযান |
দেশ |
উৎক্ষেপণের তারিখ |
প্রধান লক্ষ্য ও
ফলাফল |
বেপিকলম্বো (Bepi-Colombo) |
ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন |
20/10/2018 |
শুক্র গ্রহের পাশ
দিয়ে দুবার উড়ে গিয়ে বুধের চারপাশে ঘুরা |
মিশন চলছে |
চিত্র 48: বেপিকলম্বো
শুক্র
গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য মাত্র কিছুদিন আগে (২০ অক্টোবর ২০১৮) আরেকটি
নভোযান পাঠানো হয়েছে যার নাম বেপিকলম্বো। এটা মূলত বুধ গ্রহের মিশন। ২০২৫ সালের
ডিসেম্বর মাসে এটা বুধ গ্রহে গিয়ে পৌঁছাবে। বুধ
গ্রহ সম্পর্কে আলোচনার সময় আমরা বেপিকলম্বো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।[3]
শুক্র গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাবে বলেই বেপিকলম্বোর কথা এখানে উল্লেখ করা হলো।
শুক্র গ্রহে এপর্যন্ত
যতগুলো অভিযান চালানো হয়েছে তাদের সবগুলো থেকেই বিজ্ঞানীরা তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ
করেছেন। শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডল, ভূমির অবস্থা, চাপ, তাপ ইত্যাদির দিকে এবার নজর
দেয়া যাক।
[1] হ্যালির
ধুমকেতু পৃথিবী ও শুক্রের কাছাকাছি এসেছিল ১৯৮৬ সালে। আবার আসবে ২০৬১ সালে। ৭৫-৭৬
বছর পর পর পৃথিবীর কাছাকাছি আসে এই ধুমকেতু।
[2] বিস্তারিত
জানার জন্য পড়ো প্রদীপ দেবের 'বুধ: যে
গ্রহে একদিন সমান দুই বছর', মীরা প্রকাশন,
ঢাকা, ২০১৮।
[3] বেপিকলম্বো
মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ো প্রদীপ দেবের 'বুধ: যে গ্রহে একদিন সমান দুই বছর', মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৮।
দু হাজার কোটি টাকা শুনতে সামান্য মনে হলো। দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের কানে অনেক কিছুই কম শোনায়।কত কিছু যে ভাবনাতে আসে?
ReplyDeleteঠিক বলেছেন। আমাদের দেশে যত টাকার দুর্নীতির খবর আমরা পাই, সেই টাকা দিয়েই অনেক উন্নত মানের গবেষণা সম্ভব।
Deleteদু হাজার কোটি টাকা শুনতে সামান্য মনে হলো। দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের কানে অনেক কিছুই কম শোনায়।কত কিছু যে ভাবনাতে আসে?
ReplyDeleteদু হাজার কোটি টাকা শুনতে সামান্য মনে হলো। দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের কানে অনেক কিছুই কম শোনায়।কত কিছু যে ভাবনাতে আসে?
ReplyDelete