Saturday 14 November 2020

যে গ্রহে সূর্য উঠে পশ্চিম দিকে - পর্ব ১৫

 



দশম অধ্যায়

শুক্র গ্রহের ভবিষ্যৎ

 

মানুষ পৃথিবীর আকাশে চোখ মেলেই সূর্য ও চাঁদের মতোই তৃতীয় উজ্জ্বল যে বস্তুটি আকাশে দেখেছিল সেটা শুক্র। পুরো সত্যিটা না জেনেই নাম দিয়েছিল শুকতারা এবং সন্ধ্যাতারা। গ্রহ জানার পরও তার  নাম হয়েছে সৌন্দর্য ও ভালোবাসার দেবী ভেনাসের নামে। কম্পনায় ভেনাসের যে রূপ - আক্ষরিক অর্থেই সেরকম আগুনঝরা রূপ ভেনাস তথা শুক্র গ্রহের। সেই প্রথম যখন মহাকাশে অভিযান চালাতে শুরু করলো মানুষ, আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্রহ শুক্রকেই লক্ষ্য করেছিল। এত বছর ধরে ক্রমাগত বৈজ্ঞানিক মিশনের পর আজ মানুষ সৌরজগতের সবগুলো গ্রহতেই কোন না কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। অন্য কোন গ্রহে এখনো মানুষ যেতে না পারলেও পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে মানুষ সশরীরে উপস্থিত হয়েছে অনেক বার। মঙ্গল গ্রহে অভিযান নিয়ে মানুষ অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু শুক্রের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

          উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি কল্পিত চিত্র। উড়ন্ত নভোযানে করে মানুষ শুক্রের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। উড়ন্ত নভোযানের চারপাশে গ্যাসের মেঘ। নভোযানটি এমনভাবে তৈরি যে কোন বিষাক্ত গ্যাসই তার কোন ক্ষতি করতে পারছে না। এমন যদি হতো তবে বেশ ভালোই হতো তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ওটা এখনো কল্পনা।

          শুক্র গ্রহের পরিবেশ মানুষ শুধু নয়, মানুষের তৈরি আধুনিক যন্ত্রের জন্যও উপযোগী নয়। আমরা দেখেছি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলোও ঘন্টাখানেকও সচল থাকতে পারছে না শুক্রের তাপ ও চাপে। সেক্ষেত্রে শুক্রের ভূমিতে কোন একদিন মানুষের পা পড়বে - এটা যদি বিশ্বাস করো তাহলে বলতে হবে সেই দিন আসতে এখনো অনেক দেরি।

          আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্রহ শুক্রকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক পরিকল্পনা আছে। সবচেয়ে আগে যেটা বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনা আছে সেটা হলো শুক্রের বৈরি পরিবেশে দীর্ঘ সময় টিকে থাকার মতো টেকসই যন্ত্রপাতি তৈরি করা, ইলেকট্রনিক্স উদ্ভাবন করা। তারপর শুক্রের পিঠে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল করতে পারে এরকম রোবট পাঠানো। বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু ডিজাইনও করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। শুক্রের  বায়ুমন্ডলের অনেক উপরে ভাসমান মহাকাশযান থেকে রোবট নামিয়ে দেয়া হবে শুক্রের ভূমিতে। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করে রোবটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হবে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। অদূর ভবিষ্যতে এরকম হবার সম্ভাবনা আছে।

 

 

চিত্র শুক্র গ্রহের ভবিষ্যৎ

 

আর সুদূর ভবিষ্যতে পাঁচ শ কোটি বছর পর আমাদের সূর্যের মৃত্যু হবে এটা নিশ্চিত। সূর্যের জ্বালানি - হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে। তখন সূর্য রেড জায়ান্ট বা লাল দৈত্যে পরিণত হবে। কিন্তু তার আগেই সূর্যের কাছের চারটি গ্রহ - বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল উধাও হয়ে যাবে। এসব নিয়ে আপাতত খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ এসব ঘটবে আজ থেকে আরো প্রায় পাঁচ শ কোটি বছর পর। পাঁচ শ কোটি বছর তো অনেক বছর - তাই না? সুতরাং চিন্তা বাদ দিয়ে চটপট হিসেব করে বলো দেখি পৃথিবীর পাঁচ শ কোটি বছরে শুক্রের কত বছর হবে?

______

 

তথ্যসূত্র 

1.   Clare Gibson, the Solar System, King Books, UK, 2012

2.   Giles Sparrow, Planets and Moons, Hinkler Books, Australia, 2006.

3.   Colin Ronan, The Universe Explained, Ken Fin Books, Australia, 1997.

4.   David A Rothery, Planets a very short introduction, Oxford University Press, Great Britain, 2010.

5.   Chris Cooper, Pam Spence, Carole Stott, Stars + Planets an illustrated guide, Star Fire, London, 2007.

6.   Gerard Cheshire, The Solar System and Beyond, Evans, London, 2006.

7.   Steve Parker, Solar System, Ticktock Media Ltd, Great Britain, 2006.Clare

8.   Heather Couper and Nigel Henbest, Encyclopedia of Space, DK Publishing, UK, 2003.

9.   Robin Kerrod & Carole Stott, Hubble the Mirror on the Universe, Third Edition, David and Charles, London, 2008.

10. Patrick Moore, Mission to the Planets, Cassell, New York 1995.

11.https://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/education/schoolyard_ss/sss_venusm.html

12.https://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/factsheet/venusfact.html

13. NSSDC Master Catalog, http://nssdc.gsfc.nasa.gov/nmc/

14. https://nssdc.gsfc.nasa.gov/planetary/chronology_venus.html

15. National Space Science Data Center,

      http://nssdc.gsfc.nasa.gov/

16. Solar System Log by Andrew Wilson, published 1987 by Jane's Publishing Co. Ltd.

17.  L. T. Elkins-Tanton, Sun, Mercury, and Venus, Broomall: Infobase Publishing, 2010.   

18. প্রশান্ত প্রামাণিক, গ্রহ তারক চন্দ্র তপন, জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী, আগরতলা, ২০১৩।

19.http://www.isas.jaxa.jp/en/missions/spacecraft/current/akatsuki.html

20. প্রদীপ দেব, অর্ক ও সূর্যমামা: সূর্যের বিজ্ঞান, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৫।

21. প্রদীপ দেব, পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৬।

22. প্রদীপ দেব, চাঁদের নাম লুনা, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭।

23.  প্রদীপ দেব, বুধ যে গ্রহে একদিন সমান দুই বছর, মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৮।

24. Patrick Moore, Venus, Cassell Illustrated, London, 2002.


No comments:

Post a Comment

Latest Post

বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও

  পানি-দূষণের মাত্রা নির্ধারণের দ্রুততম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘টেথিস’ উদ্ভাবন করে গীতাঞ্জলি রাও যখন   ২০১৭ সালে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানীর শ...

Popular Posts