Saturday, 19 October 2019

অর্ক ও সূর্যমামা: সূর্যের বিজ্ঞান - পর্ব ৪


সূর্য কী এবং কোথায়

এতক্ষণের আলোচনা থেকে তোমরা জানো যে সূর্য একটি নক্ষত্র। সূর্যের মতো আরো কোটি কোটি কোটি নক্ষত্র আছে মহাকাশে যারা সবাই নিজে নিজে আলো দেয়। অর্থাৎ নক্ষত্রের নিজের আলো আছে। কীভাবে এই আলো তৈরি হয় তা আমরা একটু পরে আলোচনা করবো। তার আগে দেখা যাক অন্যান্য নক্ষত্রের ভীড়ে আমাদের সূর্যের অবস্থান কোথায়।
            সময়ের পরিবর্তনে মহাশূন্যে প্রাকৃতিক বল ও মিথষ্ক্রিয়ায় (interaction) মহাকাশে কোটি কোটি কোটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ। আমাদের সূর্য যেই ছায়াপথের ওপর আছে - তার নাম মিল্কিওয়ে। মিল্কিওয়ের আছে বেশ কয়েকটি শাখাপথ। একটি শাখাপথের নাম অরিয়ন (Orion)। এই অরিয়নেই আমাদের সূর্যের অবস্থান।
            আমাদের গ্যালাক্সিতে কোটি কোটি নক্ষত্র। সূর্য তাদের মধ্যে একটি। সূর্যের আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই নক্ষত্রের রাজ্যে। তবে যেহেতু আমরা  সৌরজগতে বাস করি এবং অন্যান্য নক্ষত্রের জগৎ সম্পর্কে আমরা এখনো খুব বেশি বিস্তারিত জানতে পারিনি তাই আমাদের জন্য সূর্য অবশ্যই একটি বিশেষ নক্ষত্র।


চিত্র: মিল্কিওয়েতে সূর্যের অবস্থান

           
পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিলিয়ন (১৫ কোটি) কিলোমিটার। সূর্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে সৌরজগৎ যে জগতের রাজা হচ্ছে সূর্য। কারণ সূর্যই এই জগতের সকল শক্তির উৎস। কিন্তু নক্ষত্রের জগতে সূর্য একটি সাদামাটা সাধারণ সদস্য। বিজ্ঞানীরা মহাকাশে এত বেশি নক্ষত্র দেখতে পাচ্ছেন যে নক্ষত্রগুলোর শ্রেণিবিভাগ করার দরকার হলো। নক্ষত্রের শ্রেণিবিভাগের জন্য হার্টজস্প্রাং-রাসেল মডেল ব্যবহার করা হয়। ১৯০০ সাল পর্যন্ত আমাদের নক্ষত্রমন্ডলীর কোন শ্রেণিবিভাগ ছিলো না। হার্টজস্প্রাং-রাসেল ডায়াগ্রাম আবিষ্কৃত হবার পর নক্ষত্রগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে চিহ্নিত করা সহজ হয়ে গেলো। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই ডায়াগ্রাম খুবই দরকারি।
            ড্যানিশ জ্যোতির্বিদ এইনার হার্জস্প্রাং ও আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেনরি নরিস রাসেল স্বতন্ত্রভাবে আবিষ্কার করেন এই টেবিল। ১৯০৫ সালে হার্টজস্প্রাং ও ১৯১৩ সালে রাসেল এই টেবিল প্রকাশ করেন। বিভিন্ন নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা ও তাপমাত্রার হিসেবে এই টেবিল তৈরি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যখন নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন তখন সরাসরি তার তাপমাত্রা বা উজ্জ্বলতা মাপা যায় না। পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ও কী ধরনের আলো এসে পৌঁছায় তা হিসেব করে এবং তার সাথে আনুষঙ্গিক অন্য সব প্যারামিটার হিসেব করে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা ও তাপমাত্রা মাপা হয়।


চিত্র: হার্টজস্প্রাং-রাসেল ডায়াগ্রাম

উপরের চিত্রটি খেয়াল করলে দেখবে শতকরা ৯০ ভাগ নক্ষত্র কোণাকুণি একটা কাল্পনিক ফিতার মতো পথের অন্তর্ভুক্ত। বামদিকে উপরের কোণ থেকে শুরু করে ডানদিকে নিচের কোণ পর্যন্ত যে একটা ফিতার মত দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে কালো বিন্দুর মতো যেগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো সব স্বাভাবিক নক্ষত্র। আমাদের সূর্য একটি স্বাভাবিক নক্ষত্র। অন্যান্য যে বিন্দুগুলো এই ফিতার বাইরে দেখা যাচ্ছে সেগুলো সব অস্বাভাবিক নক্ষত্র। অস্বাভাবিক নক্ষত্র মানে বিশাল দৈত্যাকৃতি মৃত নক্ষত্র - যাদের আলো ও শক্তি উৎপন্ন করার ক্ষমতা আর নেই। স্বাভাবিক নক্ষত্রগুলোর শ্রেণি হলো ও, বি, এ, এফ, জি, কে, এম। আমাদের সূর্য জি শ্রেণিভুক্ত।
            চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে জি শ্রেণির নক্ষত্রের তাপমাত্রা প্রায় ছয় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস, বর্ণ হলুদ, পরম মান +৫। সূর্যের আপেক্ষিক মান -২৬ দশমিক ৮৭ যা হলো পৃথিবী থেকে সূর্যের উজ্জ্বলতার পরিমাপ। আর পরম মান হলো প্রায় ৩৩ আলোক-বর্ষ দূর থেকে সূর্যকে কেমন উজ্জ্বল দেখাবে তার মান।
            আলোক-বর্ষ হলো দূরত্বের একক। আলো এক সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সে হিসেবে এক বছর সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে - সেই দূরত্বকে বলা হয় এক আলোক-বর্ষ। (হিসেব করে বের করো দেখি এক আলোক-বর্ষ সমান কত কিলোমিটার?)
            তাহলে আমরা জানলাম আমাদের সূর্য হলো একটি সাধারণ জি টাইপ নক্ষত্র যেটা পৃথিবী থেকে প্রায় পনেরো কোটি কিলোমিটার দূরে আছে। এবার দেখা যাক সূর্যের জন্ম কীভাবে হলো।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

James Watson – an extraordinary scientist, but an intolerable racist and misogynist man

  The “Eagle” pub on the Cambridge campus has become as famous as Cambridge University itself, having witnessed hundreds of discoveries, inn...

Popular Posts