Sunday, 1 July 2018

পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন



২০০১ সালে যখন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান দখল করলো, তখন সারাদেশে ভূমিকম্পের মতো অবস্থা হয়ে গেলো। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, সুতরাং দায়িত্ব এড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু নেতারা দায়িত্বহীনের মতো মন্তব্য করলেন ইচ্ছেমতো। দুর্নীতি কমানোর কোন ব্যবস্থা নিলেন না। বিএনপিসহ সব বিরোধী দল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টকে তুরুপের তাসের মতো ব্যবহার করলো সরকারের বিরুদ্ধে।

এরপর নির্বাচন হলো। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলো। ২০০২ সালের দুর্নীতির রিপোর্টে বাংলাদেশ আবারো শীর্ষস্থান দখল করলো। এবার বিএনপি ক্ষমতায়। তবুও দোষ গেলো আওয়ামী লীগের ঘাড়ে। কারণ ২০০১ সালের অর্ধেকেরও বেশি সময় তারা ক্ষমতায় ছিলো। ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার কড়া কড়া কথা বললেন, যতটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে, তার চেয়ে অনেক বেশি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। অনেক অনেক সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় লেখা হলো সংবাদপত্রগুলিতে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের গায়ে আঁচড়ও লাগলো না।

২০০৩ সালে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ আবারো চ্যাম্পিয়ন হলো। এবারও আওয়ামী লীগ দায়ী? অবিশ্বাস্য হলেও সেরকমই বলা হলো। এমন সব মন্তব্য বের হলো রাষ্ট্রের উঁচু পর্যায়ের নেতাদের মুখ থেকে, শুনে মনে হলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ঘুষ খেয়েই দুর্নীতির রিপোর্ট তৈরি করেছে। আরো মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশের মন্ত্রীরা ইওরোপ আমেরিকার দুর্নীতি নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে গলা ফাটিয়ে ফেললেন। সাথে অবশ্য আওয়ামী লীগের কান মলে দিতে ভুলে গেলেন না। দুর্নীতিবাজদের এবারো কিছু করা হলো না। অনেক বুদ্ধিজীবীই লিখলেন – বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না ইত্যাদি। রিপোর্টে কিন্তু বলা আছে ঠিক কোন্‌ কোন্‌ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত। সেখানে কিন্তু কোনভাবেই সাধারণ মানুষকে ঢালাওভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত বলা হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে আবেগাক্রান্ত করে ছেড়ে দেয়া হলো ব্যাপারটা।

২০০৪ সালের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে দেখা গেলো বাংলাদেশ আবারো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টানা চতুর্থবারের মতো দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান দখল করেছে আমার প্রিয় বাংলাদেশ। আমরা কি তবে দুর্নীতির সেরা আসনটি পাকাপাকি ভাবেই পেয়ে গেলাম?

বাংলাদেশে মূলত দুইটি রাজনৈতিক দল আছে। একটা আওয়ামী লীগ, অন্যটি হলো অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেও যেরকম ঝড় ওঠে, সারাদেশ  দুর্নীতি আর  সন্ত্রাসের দায়ের কোপে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পরেও সেরকম কোন ঝড়ের চিহ্ন নেই। কারণটা কি ভয়? নাকি আসলেই খুব সুখে আছে বাংলাদেশের মানুষ??

২০০৫ সালের রিপোর্টেও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার অবশ্য আফ্রিকান দেশ চাদও সঙ্গী হয়েছে। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Tsung-Dao (T.D.) Lee

  The Nobel Prize in Physics 1957 was awarded jointly to Chen Ning Yang and Tsung-Dao (T.D.) Lee "for their penetrating investigation o...

Popular Posts