সাধারণ মানুষের
বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে যেসব বিজ্ঞানী অগ্রণী
ভূমিকা পালন করেছেন কার্ল স্যাগান ছিলেন তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বলতম। টাইম ম্যাগাজিন কার্ল
স্যাগানকে অভিহিত করেছেন আমেরিকার সবচেয়ে সফল বিজ্ঞান-উপস্থাপক হিসেবে। পৃথিবীবিখ্যাত
বিজ্ঞানীদের মধ্যে হাতেগোণা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী কঠিন জটিল বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি
সাধারণ মানুষের জন্যও সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের কথা লিখেছেন। কার্ল স্যাগান ছিলেন এই হাতেগোণা
ক’জন বিজ্ঞানীর একজন – যিনি ছয় শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করার পাশাপাশি দুই ডজনের বেশি
জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই লিখেছেন। টেলিভিশনে বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান করে তিনি বিজ্ঞানকে পৌঁছে
দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে। তাঁর তেরো পর্বের টেলিভিশন ডকুমেন্টারি – কসমস প্রচারিত হয়েছে
বিশ্বের প্রায় ষাটটি দেশে। মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন প্রায় ষাট কোটি দর্শক। এই ডকুমেন্টারিতে
তিনি সহজ প্রাণবন্ত ভাষায় বর্ণনা করেছেন মহাকাশের গ্রহগুলির প্রকৃতি, পৃথিবীতে প্রাণের
উৎপত্তি ও বিবর্তন, পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা আছে কি
না ইত্যাদি সব বিষয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর ডকুমেন্টারি, বই, এবং গবেষণা সমৃদ্ধ করেছে
বিংশ শতাব্দীর মহাকাশবিজ্ঞান।
কার্ল এডওয়ার্ড স্যাগানের জন্ম আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর। তাঁর বাবা স্যামুয়েল স্যাগান ছিলেন একটি পোশাক কারখানার ম্যানেজার। মা র্যাছেল স্যাগান ছিলেন গৃহবধু। কার্ল স্যাগানের মহাকাশের রহস্যের প্রতি আগ্রহ জন্মে একেবারে ছোটবেলা থেকে যখন মায়ের হাত ধরে পাড়ার লাইব্রেরিতে গিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রের ছবিওয়ালা বইগুলি নাড়াচাড়া করতেন।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর ১৯৬০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে
পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গাইড ছিলেন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কুইপার।
আমাদের সৌরজগতের ‘কুইপার বেল্ট’ এর নাম তাঁর নামেই রাখা হয়েছে। কার্ল স্যাগান বৃহস্পতি
এবং শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডল সংক্রান্ত বিস্তারিত গবেষণা করেন। শুক্র গ্রহের অস্বাভাবিক
চাপযুক্ত বায়ুমন্ডলের বৈশিষ্ট্য এবং তার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করেন কার্ল স্যাগান।
নাসার অনেকগুলি স্পেস মিশনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কার্ল স্যাগান। ১৯৭৭ সালে মহাকাশে
প্রেরিত ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ এ পাঠানো গোল্ডেন রেকর্ড-এর ডিজাইন করেন কার্ল স্যাগান
যেখানে পৃথিবীর মানুষসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছবি, শব্দ এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবাণী
পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর বাইরে – যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণি থাকে তাহলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ
করার জন্য।
বিজ্ঞানকে জনপ্রিয়
করে তোলার পেছনে প্রচুর শ্রম দিয়েছেন কার্ল স্যাগান। ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মাত্র
৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন কার্ল স্যাগান।

No comments:
Post a Comment