Tuesday, 9 January 2024

স্টিফেন হকিং-এর জন্মদিন ২০২৪

 


স্টিফেন হকিং এর জন্মদিন ৮ জানুয়ারি। 

বেঁচে থাকলে তিনি আজ ৮২ হতেন। বিজ্ঞানীদের মধ্যে তাঁর মতো জনপ্রিয়তা ছিল আর মাত্র তিনজনের – গ্যালিলিও, নিউটন আর আইনস্টাইনের। 

গ্যালিলিও, নিউটন এবং আইনস্টাইন তাঁদের নিজ নিজ আবিষ্কারের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বিজ্ঞানের চেহারা বদলে দিয়েছেন – সেটা তাঁদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বার বার প্রমাণিত হয়েই চলেছে। কিন্তু হকিং আসলে কী করেছেন যার জন্য তিনি এত খ্যাতি লাভ করেছেন – সেই প্রশ্নের সহজ কোন উত্তর নেই – এমন কোনো প্রমাণও হাতে নেই যে বলা চলে হকিং না থাকলে এরকম হতো কিংবা ওরকম হতো। 

হকিং-এর মৌলিক কাজ যতটা – তার চেয়েও অনেক বেশি হলো তাঁর জনপ্রিয় বিজ্ঞান বা পপুলার সায়েন্সের বইগুলি। সেগুলিরও পাঠকপ্রিয়তা বেড়েছে – হকিং-এর সার্বক্ষণিক মিডিয়া উপস্থিতির কারণে। হকিং-এর মতো মিডিয়া-পণ্য আর কোন বিজ্ঞানী কোন যুগেই হয়ে ওঠেননি। 

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘ডেইলি সান’ প্রায় প্রতিদিনই স্টিফেন হকিং-কে নিয়ে নানারকম সংবাদ ছাপাতো। তাদের বিজ্ঞানপাতা জুড়ে হকিং-এর নামে যা থাকতো – তাতে আর যাই থাকুক – বিজ্ঞান থাকতো না। যেমন হকিং এর বয়ানে বলা হতো – এলিয়েনরা পৃথিবীতেই মানুষের মাঝে মিশে আছে- এরকম আরো অনেক কিছু। ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারি – হকিং-এর ৭৬তম জন্মবার্ষিকীর কয়েক দিন পরেই বিশাল এক প্রবন্ধ ছাপানো হয় ডেইলি সানে – যেখানে অনুমান করা হয়েছে প্রকৃত স্টিফেন হকিং মারা গেছেন অনেক বছর আগে, যে হকিং হুইল চেয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন – তিনি আসলে হকিং-এর মতো দেখতে একটি পুতুল। এরকম সন্দেহ হবার পেছনে তারা কিছু কারণ দেখিয়েছে – যেমন হকিং-এর যে অসুখ হয়েছে – তাতে এত বছর বেঁচে থাকার কথা নয় কিছুতেই, হকিং-কে ২০১৭ সালে দেখতে ১৯৮২ সালের চেয়েও তরুণ মনে হয়, কথা যেহেতু তিনি বলতে পারেন না, সেহেতু কম্পিউটারের ভয়েজ আগে যেমন ছিল এখনো তেমন আছে, কিন্তু আগে তিনি কথা বলতে অনেক সময় নিতেন, কিন্তু এখন অনেক তাড়াতাড়ি কথা বলতে পারেন, তিনি আগে এত রাজনীতি বিষয়ক (ট্রাম্প বিরোধী, ব্রেক্সিট বিরোধী) কথাবার্তা বলতেন না – ইত্যাদি ইত্যাদি। এর দুমাস পর হকিং সত্যিই মারা যাবার পর এ বিতর্ক আর বেশিদূর এগোয়নি। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেছেন যে হকিং আসলে ১৯৮৫ সালেই মারা গেছেন নিউমোনিয়ায়। অবশ্য তাদেরকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার  কোন দরকার নেই – কারণ হকিং-এর এত্তো জনপ্রিয় সব বই লেখা হয়েছে ১৯৮৫ সালের পরে। 

[ডেইলি সান এর রিপোর্টটির লিংক নিচে দেয়া হলো। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।]

হকিং-এর শারীরিক অক্ষমতা যতটা না তাঁর জীবনধারণ কঠিন করে তুলেছে – তার সেই অক্ষমতাকে ফোকাস করেই মিডিয়াগুলি দিনের পর দিন হকিং-কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বানিয়ে দিয়েছে সুপারস্টার। গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে শুরু করে আমৃত্যু হকিং তা উপভোগ করে গেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ভ্যাটিকানের পোপ, ইংল্যান্ডের রানি – সবার সাথেই তাঁর মিডিয়া-প্রেজেন্সের আয়োজন করেছিলেন তাঁর আয়োজক-কোম্পানি, বিভিন্ন ইভেন্টে জনপ্রিয় বক্তৃতা, নাসার জিরো-গ্রাভিটি শাটলে ভ্রমণ, বিগ-ব্যাং থিওরির মতো সিরিয়ালে উপস্থিতি –ইত্যাদির মাধ্যমে তারা শুধুমাত্র মিডিয়াস্বত্ব থেকেই উপার্জন করেছে লক্ষ লক্ষ ডলার/পাউন্ড/ইউরো। 

স্টিফেন হকিং এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে হলিউডের বিখ্যাত (যৌন নির্যাতক হিসেবে পরবর্তীতে কুখ্যাত) জেফরি এপস্টেইন তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন এবং বিভিন্ন পার্টিতে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতেন। অতিসম্প্রতি শিশুদের উপর যৌননির্যাতনের এক মামলার নথিতে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন, ব্রিটিশ রাজপুত্র অ্যান্ড্রুর পাশাপাশি স্টিফেন হকিং-এর নামও এসেছে – যারা জেফরি এপস্টেইনের পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন যেখানে যৌন নির্যাতন ঘটেছিল। হকিং-এর বিরুদ্ধে অবশ্য কোন অভিযোগ করা হয়নি।

তাহলে যতটা মিডিয়া কভারেজ পেয়েছেন, সেই তুলনায় হকিং-এর যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে কি কিছুই নেই? অবশ্যই আছে। ব্ল্যাক হোল থেকে যে বিকিরণ ঘটে যা ‘হকিং রেডিয়েশান’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে তা নিঃসন্দেহে তাঁর বড় তাত্ত্বিক আবিষ্কার। বেঁচে থাকলে ২০২০ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারের তিনিও অংশীদার হতে পারতেন – সেক্ষেত্রে হয়তো রেইনহার্ড গেনজেল অথবা অ্যান্ড্রিয়া গেজ – কেউ একজনকে বাদ দিতে হতো। কিন্তু সিংগুলারিটি বিষয়ে রজার পেনরোজের তাত্ত্বিক কাজ হকিং-এর কাজের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তৃত। 

হকিং-এর বৈজ্ঞানিক অবদানের চেয়েও অনেক বেশি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আরো অসংখ্য বিজ্ঞানী। তাঁদের কাজের জন্য তাঁরা নোবেল পুরষ্কার পেলেও – পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ তাঁদের চেনেনও না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা আর জনপ্রিয় হওয়া এক কথা নয়। স্টিফেন হকিং জনপ্রিয় ছিলেন – থাকবেন আরো অনেক বছর সন্দেহ নেই।

শুভ জন্মদিন স্টিফেন হকিং। 

___________

ডেইলি সানের লিংক



No comments:

Post a Comment

Latest Post

FLASH Radiotherapy: A New Possibility in Cancer Treatment

  Cancer is the disease before which humanity feels the most helpless. Every year, the number of cancer patients continues to rise at an ala...

Popular Posts