Thursday, 11 May 2023

প্রকৃতিবিদ ডেভিড অ্যাটেনবরো

 


প্রকৃতি এবং প্রকৃতির প্রাণিদের বিচিত্র জগতের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটানোর ক্ষেত্রে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো শুধু পথিকৃতই নন, এই ৯৭ বছর বয়সেও এক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডেভিড অ্যাটেনবরোর জন্ম ১৯২৬ সালের ৮মে লন্ডনে। তাঁর বাবা ফ্রেডেরিক অ্যাটেনবরো ছিলেন লেস্টার ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রিন্সিপাল। ফ্রেডেরিক ও মেরি আটেনবরোর তিন পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র ডেভিড। ডেভিডের বড়ভাই রিচার্ড অ্যাটেনবরো ছিলেন নামকরা চিত্রাভিনেতা এবং পরিচালক। ছোটভাই জন অ্যাটেনবরো ছিলেন ইতালিয়ান আলফা রোমিও গাড়িপ্রস্তুতকারক সংস্থার ব্রিটিশ অফিসের হেড। 

ডেভিড অ্যাটেনবরো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লেয়ার কলেজ থেকে প্রাণিবিজ্ঞান ও ভূতত্ত্ববিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ রয়েল নেভিতে ছিলেন এবং ল্যাফটেন্যান্ট র‍্যাংক পাবার পর নৌবাহিনী থেকে চলে আসেন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত তিনি কাজ করেন একটি প্রকাশনা সংস্থায় সহকারি সম্পাদক হিসেবে। ১৯৫২ সালে তিনি বিবিসি টেলিভিশনে যোগ দেন শিক্ষানবিস প্রযোজক হিসেবে। 

১৯৫৪ সালে তিনি শুরু করেন বন্য প্রাণিদের নিয়ে প্রথম তথ্যচিত্র ‘জু কোয়েস্ট’। পশ্চিম আফ্রিকার বন্যপ্রাণিদের নিয়ে কাজ শুরু। তারপর একের পর এক তথ্যচিত্র নির্মাণ করে গেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নিরলসভাবে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত দশ বছরে ৪৮টি পর্ব প্রচারিত হয় – জু কোয়েস্টের। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত বিবিসি টেলিভিশনের উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন ডেভিড অ্যাটেনবরো। তারপর তিনি বিবিসি থেকে পদত্যাগ করে স্বাধীনভাবে তথ্যচিত্র তৈরি এবং লেখায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি আদিবাসিদের নিয়ে সাত পর্বের তথ্যচিত্র ‘দ্য ট্রাইবাল আই’ তৈরি করে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে তিনি তৈরি করেন ‘লাইফ অন আর্থ’। পৃথিবীর উদ্ভবের পর থেকে উদ্ভিদ, প্রাণিকুল, মানুষ কীভাবে বিবর্তিত হতে হতে বর্তমান রূপ লাভ করেছে – তার চাক্ষুষ প্রমাণ তিনি হাজির করেন তেরো পর্বের এই তথ্যচিত্রে। এরপর ১৯৮৪ সালে ‘দ্য লিভিং প্ল্যানেট’, ১৯৯০ সালে ‘দ্য ট্রায়ালস অব লাইফ’, ১৯৯৫ সালে ‘দ্য প্রাইভেট লাইফ অব প্ল্যান্টস’, ১৯৯৮ সালে ‘দ্য লাইফ অব বার্ডস’, ২০০২ সালে ‘দ্য লাইফ ব ম্যামালস’, ২০০৫ সালে ‘লাইফ ইন দি আন্ডারগ্রাউন্ড’, ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন কোল্ড ব্লাড’। শুধু তথ্যচিত্র নয়, অনেকগুলি প্রামাণ্য বই তিনি লিখেছেন – যেগুলি পরিবেশ ও প্রাণিবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেকদূর। 


এই ছবিটি ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তোলা। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড স্টিফেন হকিং ও ডেভিড অ্যাটেনবরোকে ‘বডলি মেডেল’ প্রদান করে বিজ্ঞান ও সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান রিচার্ড ওভেনডেন হকিং ও অ্যাটেনবরোর হাতে এই পুরষ্কার তুলে দিয়েছিলেন। 


এই সাতানব্বই বছর বয়সেও তিনি সক্রিয়। আজীবন কাজ করে গেছেন এই পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় এবং পৃথিবীকে কীভাবে আরো সুন্দর করা যায় এই চেষ্টায়। সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে অবদান রাখার জন্য ২০০৩ সালে তিনি পেয়েছেন রয়েল সোসাইটির ‘মাইকেল ফ্যারাডে পুরষ্কার’। ডেভিড অ্যাটেনবরো হলেন এখনো পর্যন্ত একমাত্র ব্যক্তি যিনি ব্রিটিশ একাডেমির টেলিভিশন পুরষ্কার পেয়েছেন টেলিভিশন মাধ্যমের শুরু থেকে এপর্যন্ত কারিগরি উন্নতির সবগুলি ধাপে – সাদা-কালো, রঙিন, হাই-ডেফিনেশান, থ্রি-ডি এবং ফোর-কে সব রেজ্যুলেশনে। তিন বার ‘এমি অ্যাওয়ার্ড’ তিনি তথ্যচিত্রে অতুলনীয় ধারাবর্ণনার জন্য। 

আজ ৮মে এই মানুষটির ৯৭তম জন্মদিন। 

শুভ জন্মদিন স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts