Sunday 7 February 2021

স্বপ্নলোকের চাবি - পর্ব ৬

 


০৬

“লেডিস ফাঁস মামা”

নিচু হয়ে মাটিতে রাখা টিনের বাক্সটা রিকশায় তুলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রিকশাওয়ালার কথায় থমকে দাঁড়িয়ে তাকালাম তাঁর দিকে। তাঁর এক পা প্যাডেলে, অন্য পা সামনের চাকায় লাগানো। সম্ভবত রিকশার ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে না, তাই দ্রুত থামাতে গিয়ে স্যান্ডেল পরা পা লাগিয়ে দিয়েছেন সামনের চাকায়। চাকার সাথে স্যান্ডেলের রাবারের ফ্রিকশান বা ঘর্ষণের ফলে বিপরীত ত্বরণ বা মন্দন সৃষ্টি হয়েছে, এবং রিকশা থেমে গেছে ট্রেন স্টেশনের সামনে রাস্তায়। নিউটনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সূত্রের সরাসরি প্রয়োগ। কিন্তু রিকশাওয়ালা কি এই ফিজিক্স বোঝেন? তিনি লেডিজ প্রসঙ্গে কী বললেন ঠিকমতো বুঝতে পারিনি। জিজ্ঞেস করলাম, “কী বললেন?”

“লেডিস ফাঁস মামা।“  - মাঝবয়সী রিকশাওয়ালার কন্ঠে দার্শনিকের উদাসীনতা আর বিরক্তি একসাথে মিশে আছে। তিনি বাম দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছেন প্লাটফরমের দিকে। তার মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি, কপালের এক পাশে বসন্তের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

রাস্তায় যেখানে দাঁড়িয়ে আছি – সেখান থেকে প্লাটফরমের দূরত্ব কমপক্ষে তিরিশ মিটার। রাস্তা থেকে অনেক নিচে প্লাটফরম। রাস্তা থেকে পাকা বাঁধানো প্রশস্ত সিঁড়ি নেমে গেছে প্লাটফরমে। সিঁড়ি দিয়ে খুব আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে উঠে আসছেন দু’জন ছাত্রী। রিকশাওয়ালার দৃষ্টি সেদিকে। এতক্ষণে “লেডিস ফাঁস”-এর অর্থ পরিষ্কার হলো। লেডিজ ফার্স্ট – অর্থাৎ তিনি আমাকে রিকশায় তুলবেন না। যে দু’জন উঠে আসছেন সিঁড়ি বেয়ে, তাঁদের আসতে আরো মিনিট দশেক লাগলেও তিনি তাদের জন্য অপেক্ষা করবেন। কারণ তিনি “লেডিজ ফার্স্ট” নামক ভদ্রতায় বিশ্বাসী। ক্যাম্পাসের রিকশাওয়ালাদের মধ্যে এই ব্যাপারটা মাঝে মাঝেই দেখা যায়, বিশেষ করে যখন রিকশার সংখ্যা খুব কম থাকে। অনেকগুলি রিকশা যখন থাকে, তখন রিকশাওয়ালারা নিজেদের মধ্যে সিরিয়াল মেনে চলেন। কার পর কে যাবে্ন – তা তারা নিজেরাই ঠিক করে নেন। কিন্তু যখন একটা বা দুটো রিকশা থাকে – তখন তারা ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের প্রাধান্য দেন। এর পেছনে হয়তো একটা যুক্তি আছে।  ছাত্ররা দরকার হলে অনেকদূর হাঁটতে পারে, ছাত্রীরা তো পারে না। এই যুক্তি ছাত্রীদের জন্য কিছুটা অপমানজনক হলেও রিকশাওয়ালাদের দেয়া প্রাধান্য অস্বীকার করতে  তাদের দেখা যায় না খুব একটা। রিকশাওয়ালার সাথে এখনই একটা ঝগড়া লাগিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু রুচিতে বাধলো।

সিঁড়ি ধরে অগ্রসরমান ছাত্রীদ্বয় রিকশার কাছাকাছি এসে গেছেন। সেদিকে তাকিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য রিকশাওয়ালা বেল বাজালেন। পরবর্তী ষাট-সত্তর সেকেন্ডের মধ্যেই তাদেরকে নিয়ে রিকশা চলে গেলো। যতদূর চোখ যায়, কোথাও কোন রিকশার দেখা নেই। প্রায় এগারোটা বাজে। সেকেন্ড ট্রেনে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবগুলি বাস চলে গেছে ক্যাম্পাসে। সেগুলি একটা একটা করে ফিরে আসবে। আমার সাথে ভারী বাক্স না থাকলে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।

 

কোরবান উপলক্ষে সতেরো দিন ইউনিভার্সিটি বন্ধ ছিল। রাস্তার দুপাশে নিমের মতো নাম-না-জানা গাছগুলির ডালপালা এই ক’দিনের ছুটিতে মনে হচ্ছে আরো পুষ্ট হয়েছে, পাতাগুলির সবুজ হয়েছে আরো গাঢ়। রাস্তার অন্যপাশে সবুজ ঘাস, গর্তে জমা বৃষ্টির পানির ওপারে সারি সারি দোকানের বেশিরভাগই বন্ধ। বাম কোণার রেস্টুরেন্ট ‘মামুর দোকান’-এ তেমন কোন ভীড় নেই এখনো। এই সময়ে এদিকের অবস্থা কী রকম থাকে তা আগে কখনো দেখা হয়নি। সায়েন্স ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা ফার্স্ট ট্রেনে আসে, লাস্ট ট্রেনে যায়। মাঝখানের সময়টাতে ক্লাসরুমের বাইরে কী কী হয় তা দেখার সুযোগ তাদের খুব একটা থাকে না।

 

রাস্তার পাশে গাছের নিচে বালির উপর রাখা বাক্সটার দিকে তাকালাম। টিনের বাক্সের গায়ে সাধারণত বিভিন্ন রঙের নকশা, ফুল ইত্যাদি অনেক কিছু আঁকা থাকে। এইটাতে সেরকম কিছু নেই। টিনের উপর কোন রঙই লাগানো হয়নি। ছোটবেলায় এরকম বাক্স দেখতাম যাত্রাদলের লোকজনের সাথে। সেসব বাক্সে বড় বড় অক্ষরে যাত্রাদলের নাম লেখা থাকতো। এই বাক্সের কোনদিকে কোন কিছু লেখা নেই। ৩০ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চি বাই ১২ ইঞ্চি মাপের টিনের এই বাক্সটি আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি আমার বড়ভাইয়ের কাছ থেকে। এই বাক্স সে কিনেছিল ১৯৮০ সালে পটিয়া কলেজে হোস্টেলে থাকার সময়। তারপর  আমি যখন চট্টগ্রাম কলেজের হোস্টেলে এসে উঠলাম – তখন থেকে এটা আমার হোস্টেলের সাথী। আজ এটা আমার সাথে এসেছে ইউনিভার্সিটির হলে উঠার জন্য। কিন্তু সকাল আটটায় শহর থেকে রওনা দিয়ে তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলেও এখনো হলে পৌঁছাতে পারলাম না।

 

আজ সকাল থেকে কোন কিছুই ঠিকমতো হচ্ছে না। ফার্স্ট ট্রেনের ভীড় এড়ানোর জন্য সেকেন্ড ট্রেনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। চট্টগ্রাম কলেজের হোস্টেল থেকে সকাল আটটায় রওনা দিয়ে বটতলি স্টেশন থেকে ৮টা ৪৫-এর ট্রেন ধরা কোন কঠিন কাজ নয়। রেডবিল্ডিং-এর তিন তলা থেকে বাক্সটা নিয়ে নড়বড়ে খাড়া সিঁড়ি দিয়ে যখন নিচে নামছিলাম, কেমন যেন একটা মায়া-ছেঁড়া অনুভূতি হচ্ছিল। এই হোস্টেলের সাথে আমার প্রায় সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক।

 

কলেজ রোডে চট্টগ্রাম কলেজের মেইন গেটের ডান পাশে যে উঁচু পুরনো ব্রিটিশ আমলের তিনতলা লাল দালানটি আছে, যেটাকে সবাই রেড বিল্ডিং বলে – সেটার তৃতীয় তলায় বর্তমানে অমুসলিম ছাত্রদের হোস্টেল। চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠের দক্ষিণ দিকে পরপর তিনটি হোস্টেল। পশ্চিম দিকে কলেজ রোডের পাশে শেরে বাংলা হোস্টেল। তার পূর্ব পাশে সোহরাওয়ার্দী হোস্টেল, এবং সোহরাওয়ার্দীর পূর্বপাশে সিরাজদৌল্লা রোডের সাথে লাগানো ছোট্ট জরাজীর্ণ একটি দোতলা পুরনো বাড়িতে শেরেবাংলা বি-ব্লক। এই বি-ব্লকটাই ছিলো অমুসলিম ছাত্রদের জন্য। চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য ভর্তি হয়ে সেই হোস্টেলে উঠেছিলাম। আমার উচ্চমাধ্যমিকের সময়েই আমার বড়ভাই অনার্সে ভর্তি হয়েছিল। ফার্স্ট ইয়ারের পর সে অনার্স পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও হোস্টেলের সিটটি এখনো আছে। আমি পাস করার পর তার সিটেই ছিলাম এতদিন। গতবছর ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাদ ধ্বসে পড়ে ছাত্র, কর্মী, এবং অতিথিসহ মোট ৩৯ জন মানুষ প্রাণ হারান। তারপর এরশাদ সরকার সারা দেশের পুরনো ভবনগুলিতে জরিপ চালিয়ে অনেক ভবনকে বাস-অযোগ্য ঘোষণা করে। শেরে বাংলা বি-ব্লকের ভবনটিও বসবাসের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হয়। সেই হোস্টেলের সব ছাত্রকে কয়েক ঘন্টার নোটিসে নিয়ে আসা হয় রেড বিল্ডিং-এর তৃতীয় তলায়। অথচ এই বিল্ডিং-টি পরিত্যক্ত ভবনের চেয়েও নড়বড়ে। কিন্তু এটাকে কীভাবে যেন জরিপের বাইরে রাখা হয়েছিল। এখানে এনে এক এক রুমে ছয়-সাতজন করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন বাথরুম নেই, কোন ডায়নিং নেই, কিচেন নেই, কোন তত্ত্বাবধায়কও নেই – সুতরাং ‘নেই নেই’ শোনার জন্যও কেউ নেই। উদ্বাস্তুরা যেভাবে নিরুপায় হয়ে সব কিছুর সাথে খাপ-খাইয়ে নেয়, এই হোস্টেলের ছাত্রদেরও একই অবস্থা হলো। বিল্ডিং-এর নিচের তলার এক কোণায় ছোট্ট একটি টয়লেট। এটাই ব্যবহার করে হোস্টেলের তিরিশ জন ছাত্র। বিল্ডিং-এর বাইরে রাস্তার উপর একটা পানির ট্যাপ আছে – যেখানে ওয়াসার পানি আসে। সেখানেই তিরিশ জনের গোসল। রেড বিল্ডিং-এর দোতলায় কলেজের ভূগোল বিভাগ, নিচের তলায় বিএনসিসি অফিস। প্রায়ই দেখা যায় – নিচের তলায় যখন বিএনসিসির ক্যাডেটদের অনুশীলন চলছে তখন হয়তো কেউ লুঙ্গি পরে বদনা হাতে টয়লেট থেকে বের হচ্ছে, কিংবা খোলা জায়গায় ট্যাপের নিচে বালতি বসিয়ে গোসল করছে। দোতলায় ক্লাস করার জন্য ছাত্রীরা সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, সেই সময় কেউ তিন তলা থেকে বালতি হাতে খালি গায়ে লুঙ্গি পরে নিচে নামছে গোসল করার জন্য। ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে আবেদন করা হয়েছে তাদের জন্য যথোপযুক্ত হোস্টেলের ব্যবস্থা করার জন্য, অথবা অন্য দু’টি হোস্টেলে অমুসলিম ছাত্রদের জন্যও সিট বরাদ্দ দিতে। কিন্তু এসব অভিযোগ শোনার সময় বা ইচ্ছা কর্তৃপক্ষের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অন্তত সেরকম ধর্মীয় বিভাজন নেই। শুনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হল - অমুসলিমদের জন্য আলাদা হল। সে কারণে অন্য হলগুলিতে অমুসলিম ছাত্রদের সিট বরাদ্দ দেয়া হয় না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরকম কোন নিয়ম নেই সত্য, কিন্তু অলিখিত রাজনৈতিক নিয়ম যেগুলি আছে সেগুলি তো আরো ভয়ংকর।

 

বটতলি স্টেশনে ২নং প্লাটফরম থেকে ছাড়ে ইউনিভার্সিটির ট্রেন। বাক্সের ভেতর বইপত্র তেমন নিইনি ভারী হয়ে যাবার আশংকায়। বইপত্রগুলি পরে আস্তে আস্তে নিয়ে যেতে পারবো। জামাকাপড়সহ অন্যান্য টুকটাক জিনিসপত্রে বাক্স বোঝাই। কিন্তু খুব বেশি ভারী না হলেও টিনের সরু হাতল ধরে এই বাক্স আলগে নিয়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে ঘেমে গেলাম। জায়গা পেতে সমস্যা হলো না। কিন্তু ছাড়ার মুহূর্তে সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। হঠাৎ শোনা গেল প্লাটফরমে প্রচন্ড হৈচৈ। বগি থেকে অনেকেই ছুটে নেমে গেল। অনেকে প্লাটফরমে নেমে খন্ড খন্ড ধারাবিবরণী দিতে শুরু করলো – কোন একজন রেলওয়ে অফিসারের সাথে ছাত্রদের ঝগড়া লেগে গেছে। ছাত্রদের সাথে ঝগড়া লাগা মানেই ভাঙচুরের সম্ভাবনা প্রবল। কোন যুক্তি ছাড়াই হয়তো দেখা যাবে ট্রেনের জানালার কাচ ভাঙা শুরু হবে, স্টেশন মাস্টারের অফিস তছনছ করা হবে। এসব হবার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে ট্রেন ছাড়লো দেড় ঘন্টা দেরিতে – সোয়া দশটায়। দেরিতে ছাড়ার কারণেই হয়তো – অন্যদিনের চেয়ে কিছুটা বেশি গতিতে ট্রেন চলেছে আজ। চল্লিশ মিনিটে পৌঁছে গিয়েছি ইউনিভার্সিটিতে।

 

সেকেন্ড ট্রেন আসার পর সেটা দেড়টা পর্যন্ত স্টেশনেই থাকে। দেড়টায় ফিরে যায় শহরে। এখন ট্রেনটির ইঞ্জিন ঘুরে গিয়ে অন্যদিকে গিয়ে লেগেছে। এখন দেড়টায় যাবার জন্য রেডি। প্লাটফরমে এখন কোন যাত্রী নেই। কিন্তু সেকেন্ড ট্রেন থেকে নামার সময় অনেকেই সিটের উপর ইটের টুকরো দিয়ে জায়গা রেখে গেছে। দেড়টার ট্রেনে ফিরে যাবার সময় বসে যাবে। দেরি না করলে সেকেন্ড ট্রেন আসে সাড়ে ন’টায়। সাড়ে ন’টায় এসে দেড়টায় ফিরে যেতে পারে অনেকেই। এত কম সময়ে তাদের ক্লাস করা হয়ে যায় – ভাবতেও কেমন যেন লাগে। আমাদের ক্লাস শুরু হয় ন’টা পয়ত্রিশে, আর শেষ হয় পাঁচটায়। বিজ্ঞান পড়ার মজা।

 

এতক্ষণে একটা রিকশা ফিরে এলো ক্যাম্পাস থেকে। দেড়টার ট্রেনে যাবার জন্য সোয়া এগারোটায় এসে গেছে একটা যুগল। রিকশা থামতেই আমি হাত দেখালাম। আশেপাশে রিকশায় যাবার মতো আর কেউ নেই। এবার আশা করি আমি যেতে পারবো। বাক্সের এক কোণা রিকশায় তুলে ঠেলে দিচ্ছি, এমন সময় রাস্তার অন্যদিক থেকে “হই, ইক্যা আয়” বলে কর্কশ স্বরে চিৎকার করলো কেউ।

“আইয়ির বদ্দা” – বলে তরুণ রিকশাওয়ালা সেদিকে চলে যেতে চাইলেন। আমি যতটা পারি গরম চোখে তাকিয়ে দাপট দেখানোর চেষ্টা করলাম, “আমাকে না নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”

“বদ্দায় ডাকের দে।“ রিকশা ঘুরানোর সময় আমার দিকে তাকিয়ে অনেকটা সাবধান করার ভঙ্গিতে বললো,  “জাতীয় পার্টির ক্যাডার। মারি ফেলাইব।“

 

আমার চোখের সামনে দিয়ে রিকশায় পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট টানতে টানতে চলে গেলেন জাতীয় পার্টির ক্যাডার। তার পাশে তার বডিগার্ড। বডিগার্ডের চোখে কালো চশমা, হাতে কালো চকচকে ধাতব এক বস্তু – যেই অস্ত্রের নাম আমি জানি না।

 

রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকার আর কোন মানে হয় না। রেল স্টেশন থেকে সোহরাওয়ার্দী হল এমন কিছু দূরে নয়। বাক্সটাতে চাকা লাগানো থাকলে এত সমস্যা হতো না। বাক্সে চাকা লাগানোর আইডিয়া কি কারো মাথায় এখনো আসেনি? এখনো সেরকম কিছু তো চোখে পড়েনি। এ ধরনের বাক্স বহন করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো মাথায় তুলে নেয়া। তাতে আরো একটা সুবিধা হলো। প্রচন্ড রোদে ছায়াও পাওয়া যাচ্ছে।

 

হন হন করে হেঁটে চলে যাচ্ছি শাহজালাল হলের সামনে দিয়ে। হঠাৎ রাস্তার পাশের দোকান থেকে কেউ একজন বের হয়ে আমার পাশাপাশি কয়েক পা হাঁটলো। সাদা প্যান্ট আর নীল টি-শার্ট দেখা যাচ্ছে। হাতে ধরা গিটারের কিছু অংশ দেখতে পাচ্ছি। কোন রকমে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম তাকে।

“শাহীন, তুই কই যাস?”

“তোর নিজের বাক্স, নাকি অন্যের বাক্স টানা শুরু করেছিস? গাধা। নামা বাক্স নামা মাথা থেকে।“

শাহীন ফিজিক্সে আমার ক্লাসমেট। ক্লাস খুব একটা করে না। কারণ সে জিডি পাইলট হবার জন্য পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার মাথা থেকে জোর করে বাক্স নামিয়ে বাক্সের একদিকে ধরলো। দু’জনে ধরাধরি করে সোহরাওয়ার্দীতে ঢুকলাম।

“কয় নাম্বারে উঠবি?”

“২৫২”

“ওটা তো জাতীয় পার্টির রুম।“

“অ্যাঁ?” – আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটু আগে রিকশায় দেখা ক্যাডারের মুখ – যার চোখে চশমা, হাতে নাম-না-জানা ভয়ংকর অস্ত্র।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Dorothy Crowfoot Hodgkin

  Look closely at the fingers of the person in the picture. Her fingers had not bent in this way due to age; she had been suffering from chr...

Popular Posts