Wednesday 20 January 2021

লাল গ্রহ মঙ্গল - পর্ব ৪

 



 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৯

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

২৫/০২/১৯৬৯

আমেরিকা

ম্যারিনার-৬

(Mariner-6)

মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া।

মিশন সফল। মঙ্গল গ্রহের ৭৫টি ছবি পৃথিবীতে পাঠায়।

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১০

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

২৭/০৩/১৯৬৯

আমেরিকা

ম্যারিনার-৭

(Mariner - 7)

মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া।

মিশন সফল। মঙ্গল গ্রহের ১২৬টি ছবি পৃথিবীতে পাঠায়।

 

ম্যারিনার-৬ ও ম্যারিনার-৭

১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে নাসা মঙ্গল গ্রহে আরো দুইটি স্যাটেলাইট পাঠায়। ম্যারিনার-৬ ও ম্যারিনার-৭ স্যাটেলাইট দুটোর গঠন ও পে-লোড ছিল একই রকমের। জ্বালানিসহ স্যাটেলাইটের ভর ছিল ৪১১.৮ কিলোগ্রাম। দুটো মিশনেরই মূল উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলের কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময় মঙ্গলের ভূমি ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা। অষ্টভুজ আকৃতির ম্যাগনেসিয়াম ফ্রেমের স্যাটেলাইট ম্যারিনার-৬ ও ম্যারিনার-৭ এর উচ্চতা ছিল ৪৫.৭ সেন্টিমিটার আর চওড়ায় ছিল ১৩৮.৪ সেন্টিমিটার। ফ্রেমের উপর ১ মিটার ব্যাসের অর্ধবৃত্তাকার হাই-গেইন অ্যান্টেনা লাগানো। চারটি সোলার প্যানেল - খোলা অবস্থায় যার দৈর্ঘ্য ৫.৭৯ মিটার। হাই-গেইন অ্যান্টেনার পাশেই ২.২৩ মিটার উঁচু লো-গেইন অ্যান্টেনা। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বা পে-লোডের মোট ভর ছিল ৫৭.৬ কিলোগ্রাম। যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার, রেডিওমিটার, আলট্রাভায়োলেট স্পেকট্রোমিটার, টিভি ক্যামেরা, ১৯৫ মেগাবাইট ডাটা সংরক্ষণযোগ্য টেপ-রেকর্ডার।

          ম্যারিনার-৬ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, আর ম্যারিনার-৭ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ। কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই ম্যারিনার-৬ মঙ্গলের কাছে পৌঁছে যায় ১৯৬৯ সালের ৩১ জুলাই। তার কিছুদিন আগেই মানুষ চাঁদে অবতরণ করেছে। সেই উল্লাসের জোয়ারে ম্যারিনার-৬ ও ম্যারিনার-৭ এর ব্যাপারে মিডিয়ার প্রচার খুব বেশি ছিল না। ম্যারিনার-৭ ম্যারিনার-৬ এর এক মাস পরে উৎক্ষেপণ করা হলেও সেটা মঙ্গলের কাছে পৌঁছে যায় ম্যারিনার-৬ এর পাঁচ দিন পরেই - ৫ আগস্ট। উৎক্ষেপণের পর মঙ্গলের কাছে  আসার মাঝখানে কিছু সমস্যা হয়েছিল ম্যারিনার-৭ এর। মঙ্গলে পৌঁছার কয়েকদিন আগে ম্যারিনার-৭ এর একটি ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়ে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন পর পৃথিবীর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে কমান্ড রিসিভ করতে সক্ষম হয় ম্যারিনার-৭। তারপর ম্যারিনার-৭ এর কারিগরি ত্রুটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।

 

চিত্র: ম্যারিনার-৬ ও ৭ স্যাটেলাইট

 

মঙ্গলের কাছে আসার সময় ম্যারিনার-৬ মঙ্গলের ৫০টি ছবি তুলে পাঠায়। তারপর মঙ্গলের ৩,৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে আরো ২৫টি ছবি তোলে। ম্যারিনার-৭ মঙ্গলের কাছে আসার সময় দূর থেকে ৯৩টি ছবি তোলে। আর ৩,৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে  আরো ৩৩টি ছবি তোলে। ম্যারিনার-৬ মঙ্গলের বিষুব রেখা বরাবর উড়ে যায়, আর ম্যারিনার-৭ উড়ে যায় আরো দক্ষিণ দিক দিয়ে। উড়ে যাওয়ার সময় বায়ুমন্ডলের চাপ ও তাপমাত্রা মাপা হয়। ম্যারিনার-৭ দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা মাপে - যা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের হিমাঙ্কের সমান। এই দুটো মিশনে আবিষ্কৃত হয় মঙ্গলের সবচেয়ে বড় পর্বত - অলিম্পাস মন্‌স - যা পৃথিবীর মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও প্রায় সাত গুণ উঁচু।

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১১

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

২৭/০৩/১৯৬৯

সোভিয়েত ইউনিয়ন

মার্স ১৯৬৯এ

(Mars 1969A)

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা।

উৎক্ষেপণের ৪৩৮ সেকেন্ড পর বিস্ফোরণ ঘটে। মিশন ব্যর্থ হয়।

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১২

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

০২/০৪/১৯৬৯

সোভিয়েত ইউনিয়ন

মার্স ১৯৬৯বি

(Mars 1969B)

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা।

উৎক্ষেপণের ২  সেকেন্ড পর বিস্ফোরণ ঘটে। মিশন ব্যর্থ হয়।

 

মার্স ১৯৬৯এ ও মার্স ১৯৬৯বি

১৯৬৯ সালে আমেরিকা যখন চাঁদে মানুষ পাঠাতে ব্যস্ত, সোভিয়েত ইউনিয়ন দুইটি স্যাটেলাইট পাঠায় মঙ্গলের উদ্দেশ্যে - মার্স ১৯৬৯এ ও মার্স ১৯৬৯বি। এক সপ্তাহের ভেতর এই দুইটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। মার্স ১৯৬৯এ উৎক্ষেপণ করা হয় মার্চের ২৭ তারিখ, আর মার্স ১৯৬৯বি উৎক্ষেপণ করা হয় এপ্রিলের ২ তারিখ। দুটো স্যাটেলাইটেরই গঠন ছিল প্রায় একই রকমের। কাছাকাছি সময়ে দুটো প্রায় একই রকমের স্যাটেলাইট পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল সাফল্যের হার বাড়ানো। একটা যদি কোন কারণে ব্যর্থ হয়, অন্যটি হয়তো সফল হবে। এই স্যাটেলাইট দুটোর ভর সোভিয়েত ইউনিয়ন মঙ্গলে আগে যেসব স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল তাদের চেয়ে বেশি। এর আগে একটা মিশনেও সাফল্য পায়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাই ১৯৬৯এ ও বি স্যাটেলাইট দুটোর সাফল্য নিশ্চিত করার যেরকম ব্যবস্থা করা যায় - করা হয়েছিল। কিন্তু মহাকাশ মিশনের সাফল্যে ১০০% নিশ্চয়তা দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

          যথাসময়ে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল মার্স ১৯৬৯এ। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ ঠিকমতোই সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় ধাপে পে-লোড আলাদা করার সময় ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ ঘটে। এই মিশনটিও ব্যর্থ হয়। এর সাত দিনের মাথায় উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স ১৯৬৯বি। আশা ছিল অন্তত এই অষ্টম মিশনে সাফল্য আসবে। কিন্তু এটার পরিণতি হয় আরো খারাপ। উৎক্ষেপণের ২ সেকেন্ডের মধ্যেই এটাতে আগুন লেগে যায়, আর ৪১ সেকেন্ডের মধ্যেই স্যাটেলাইটটি বিস্ফোরিত হয়ে যায়।

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৩

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

০৮/০৫/১৯৭১

আমেরিকা

ম্যারিনার-৮

(Mariner-8)

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা।

উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়। মিশন ব্যর্থ।

 

ম্যারিনার-৮

১৯৭১ সালের ৮ মে উৎক্ষেপণ করা হয় ম্যারিনার-৮। কিন্তু উৎক্ষেপণে ত্রুটির কারণে ম্যারিনার-৮ স্যাটেলাইট মঙ্গল গ্রহের দিকে না গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয় উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরেই। ম্যারিনার-৮ মিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৪

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

১০/০৫/১৯৭১

সোভিয়েত ইউনিয়ন

কসমস-৪১৯

(Cosmos-419)

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা।

পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করতে পারেনি। মিশন ব্যর্থ হয়।

কসমস-৪১৯

১৯৭১ সালে মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে এসেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই সুযোগটা নিতে চেয়েছিল। ৪,৫৪৯ কিলোগ্রাম ভরের এই স্যাটেলাইটটি অনেক আশা ও সম্ভাবনা নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০মে যথাসময়ে উৎক্ষেপণ করা হলো। স্যাটেলাইটকে নিয়ে সোভিয়েত রকেট প্রোটন-কে রওনা দিল মহাকাশে। সব ঠিক থাকলে দেড় ঘন্টা পরে রকেট থেকে স্যাটেলাইট বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য ইঞ্জিন চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত ইঞ্জিন চালু হলো না। পৃথিবীর কক্ষপথে একদিন ঘুরে আবার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢুকে ধ্বংস হয়ে গেলো স্যাটেলাইট কসমস-৪১৯। অনুসন্ধান করে দেখা গেলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন চালু করার জন্য যে টাইমারে যে সিগনাল দেয়া হয়েছিল তাতে ১.৫ ঘন্টার বদলে ১.৫ বছর সেট করা হয়েছিল। এতবড় প্রজেক্টে এরকম ছোট্ট একটা ভুলের কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের নবম মঙ্গল মিশনটিও ব্যর্থ হয়ে গেলো।

 

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৫

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

১৯/০৫/১৯৭১

সোভিয়েত ইউনিয়ন

মার্স-২

(Mars-2)

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা এবং মঙ্গলে অবতরণ করা।

মঙ্গলের চারপাশে ঘুরেছে। কিন্তু নামতে পারেনি।

 

মার্স-২

১৯৭১ সালের মে মাসে তিনটি মঙ্গল মিশনের পরিকল্পনা করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। কসমস-৪১৯ ব্যর্থ হবার পরেও তাদের হাতে ছিল মার্স-২ ও মার্স-৩ স্যাটেলাইট। মার্স-২ ও মার্স-৩ স্যাটেলাইট দুটি ছিল হুবহু একই রকমের। দুটোরই প্রধান দুটো লক্ষ্য ছিল - মঙ্গলের চারপাশে ঘোরা এবং মঙ্গলে অবতরণ করা। এ উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইটের পে-লোডে দুটো অংশ ছিল - অরবিটার ও ল্যান্ডার। অরবিটার মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরতে থাকবে, আর ল্যান্ডার মঙ্গলে অবতরণ করবে। স্যাটেলাইটের মোট ভর ছিল ৪,৬৫০ কিলোগ্রাম, যার মধ্যে অরবিটারের ভর ছিল ৩,৪৪০ কিলোগ্রাম, আর ল্যান্ডারের ভর ছিল ১,২১০ কিলোগ্রাম। স্যাটেলাইটটি ছিল ৪.১ মিটার লম্বা, আর ২ মিটার চওড়া। সোলার প্যানেল খুললে চওড়ায় মোট ৫.৯ মিটার হয়। অরবিটারের মূল লক্ষ্য ছিল মঙ্গলের ভূমি এবং বায়ুমন্ডলের মেঘের ছবি তোলা, মঙ্গলের তাপমাত্রা মাপা, ভূমির বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করা, ভূমিস্তরের উপাদান ও গঠন পরীক্ষা করা, বায়ুমন্ডলের উপাদান বিশ্লেষণ করা, সৌরঝড় পর্যবেক্ষণ করা, মঙ্গল ও তার আশেপাশে চৌম্বক ক্ষেত্রের ধর্ম পরীক্ষা করা, এবং ল্যান্ডার যেসব তথ্য সংগ্রহ করবে তা পৃথিবীতে পাঠানো।

 

চিত্র: মার্স-২ ও মার্স-৩ স্যাটেলাইট

 

অরবিটারের প্রপালসান সিস্টেমের বিপরীত দিকে মঙ্গলের ভূমিতে নামার উদ্দেশ্য তৈরি ল্যান্ডার সিস্টেম লাগানো। ল্যান্ডারে আছে ১.২ মিটার ব্যাসের ল্যান্ডিং ক্যাপসুল, ২.৯ মিটার ব্যাসের অ্যারোডায়নামিক ব্রেকিং শিল্ড, প্যারাসুট সিস্টেম, এবং ল্যান্ডার নিয়ে যাবার জন্য বিপরীতমুখী রকেট সিস্টেম। জ্বালানিসহ ল্যান্ডারের মোট ভর ১২১০ কিলোগ্রামের মধ্যে ল্যান্ডিং ক্যাপসুলের ভর ৩৫৮ কিলোগ্রাম। ল্যান্ডিং ক্যাপসুলে আছে গ্যাসচালিত স্বয়ংক্রিয় মাইক্রো-ইঞ্জিন। উচ্চ-চাপের নাইট্রোজেন এই ক্যাপসুলের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করে। নিরাপদে মঙ্গলের ভূমিতে নামার জন্য আছে স্বয়ংক্রিয় প্যারাসুট। ল্যান্ডারের মাথায় লাগানো আছে রাডার আলটিমিটার। ল্যান্ডিং মডিউলের সাথে লাগানো আছে চারটি ত্রিকোণাকৃতি দরজা।  ল্যান্ডারটি ঠিকভাবে মঙ্গলে নামার পর এই দরজাগুলি খুলে যাবে - যেন ভেতরের যন্ত্রপাতিগুলো মঙ্গলের ভূমিতে কাজ শুরু করতে পারে।

          ল্যান্ডারে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে দুটি টেলিভিশন ক্যামেরা - যা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে - যাতে সবদিক থেকে ছবি তোলা যায়। মঙ্গলের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, বায়ুমন্ডলের উপাদান, বাতাসের বেগ, ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি মাপার জন্য মাস-স্পেকট্রোমিটার। ভূমি থেকে উপাদান সংগ্রহ করার জন্য একটি যান্ত্রিক চামচও সাথে লাগানো আছে। সংগৃহীত উপাত্তগুলো সম্প্রচার করার জন্য ল্যান্ডারের উপরে লাগানো আছে চারটি অ্যান্টেনা। ল্যান্ডারের যন্ত্রপাতি চালানোর শক্তি সরবরাহ করার জন্য আছে ব্যাটারি। অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হবার আগেই এই ব্যাটারি চার্জ করা হয় অরবিটারের লাগানো সোলার প্যানেল থেকে উৎপন্ন সৌরশক্তি দ্বারা।

          ১৯৭১ সালের ১৯ মে উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স-২ স্যাটেলাইট। কোন ধরনের বিপর্যয় ছাড়াই রকেট প্রোটন-কে স্যাটেলাইটটিকে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে মঙ্গলের ট্রানজিট অরবিটে পৌঁছে দেয়। ছয় মাস পর ২৭ নভেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছার সাড়ে চার ঘন্টা আগে অরবিটার থেকে ল্যান্ডার আলাদা হয়ে যায়। অরবিটার ঠিকমতোই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় এবং মঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে থাকে। কয়েক দিন পরেই মঙ্গলের ছবি পাঠাতে থাকে পৃথিবীতে। পরপর নয়টি মিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবার পর দশম মিশনে সাফল্যের মুখ দেখে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

          অরবিটার লক্ষ্যে পোঁছালেও মার্স-২ এর ল্যান্ডার মঙ্গলের বুকে ঠিকমতো অবতরণ করতে পারেনি। অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর সেকেন্ডে ৬ কিলোমিটার বেগে, অর্থাৎ ঘন্টায় ২১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার বেগে মঙ্গলের দিকে এগোচ্ছিল ল্যান্ডার। এসময় প্যারাসুট খুলে বেগ নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল, কিন্তু প্যারাসুট খোলেনি, অন্যান্য যন্ত্রপাতিও ঠিকমত কাজ করেনি। প্রচন্ড বেগে মঙ্গলের বুকে আছড়ে পড়লো মার্স-২ এর ল্যান্ডার। তারপর আর কোন সিগনাল আসেনি ল্যান্ডার থেকে। এই ল্যান্ডারই ছিল পৃথিবীর প্রথম বস্তু যা মঙ্গল গ্রহকে ছুঁয়েছিল।

 

মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৬

উৎক্ষেপণের তারিখ

দেশ

মিশন/

মহাকাশযান

লক্ষ্য

ফলাফল

২৮/০৫/১৯৭১

সোভিয়েত ইউনিয়ন

মার্স-৩

(Mars-3)

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা এবং মঙ্গলে অবতরণ করা।

মঙ্গলের চারপাশে ঘুরেছে। কিন্তু মঙ্গলে আছড়ে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিশন আংশিক সফল।

 

মার্স-৩

মার্স-২ উৎক্ষেপণের নয়দিন পর ১৯৭১ সালের ২৮ মে তারিখে উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স-৩। স্যাটেলাইটের গঠন এবং লক্ষ্য ছিল হুবহু মার্স-২ এর মতো। উৎক্ষেপণের পর সবকিছু ঠিকমতোই ঘটেছে। ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে মার্স-৩ স্যাটেলাইট পৌঁছে গেছে মঙ্গলের কক্ষপথে। তার ঠিক চার ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে অরবিটার থেকে ল্যান্ডার বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ল্যান্ডার এগোতে থাকে মঙ্গলের ভূমির দিকে, আর অরবিটার ঘুরতে শুরু করে মঙ্গলের চারপাশে।

          মার্স-৩'র ল্যান্ডার মঙ্গলের ভূমিতে সঠিকভাবে নামতে সক্ষম হয়। সবকিছু ঠিকমতোই কাজ করেছে মঙ্গলের ভূমিতে নামার প্রথম দুই মিনিট। নামার দেড় মিনিট পরেই ছবি সিগনাল পাঠাতে শুরু করে ল্যান্ডার। কিন্তু তার ২০ সেকেন্ড পরেই ল্যান্ডারের সাথে অরবিটারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন মঙ্গলের তীব্র ধূলিঝড়ের কারণে ল্যান্ডারের ইলেকট্রনিক্স নষ্ট হয়ে যায়।

          মার্স-২ ও মার্স-৩ এর অরবিটারগুলো ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের মার্চ পর্যন্ত ছবি ও উপাত্ত পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। সেগুলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৯৭২ সালের আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে মঙ্গলের চারপাশে বিশ বার ঘুরেছে মার্স-২ ও মার্স-৩। দুটো স্যাটেলাইট থেকে মঙ্গলের মোট ৬০টি ছবি পাওয়া গেছে। ছবি ও তথ্য থেকে জানা গেছে মঙ্গল গ্রহে ২২ কিলোমিটার উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গ আছে, মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের উপরিস্তরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আছে, মঙ্গলের তাপমাত্রা -১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে +১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ ৫.৫ থেকে ৬ মিলিবার, মঙ্গলে ধুলিঝড় ভূমি থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। মার্স-২ ও মার্স-৩ এর উপাত্ত থেকে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ ও চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কেও নতুন ধারণা পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও

  পানি-দূষণের মাত্রা নির্ধারণের দ্রুততম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘টেথিস’ উদ্ভাবন করে গীতাঞ্জলি রাও যখন   ২০১৭ সালে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানীর শ...

Popular Posts