Sunday 18 June 2023

বিমল কান্তি গুহ’র “তীর্থযাত্রার ত্রিশ দিন”

 


নাপোড়া-সেখেরখীল গ্রামের বিশিষ্টজন হিসেবে বাবু বিমল কান্তি গুহকে সবাই মান্য করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন তাও অনেকদিন হলো। আমি তাঁর স্কুলে পড়াশোনা করিনি বলে সরাসরি তাঁর ছাত্র নই। কিন্তু আমাদের যুগে শিক্ষক মাত্রেই সম্মানিত ছিলেন, সরাসরি ক্লাসে পড়ানোর দরকার হতো না। আমার ছোটবেলায় আমি সব শিক্ষককেই ভয় পেতাম, বিমলস্যারও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। প্রচন্ড রকমের গম্ভীর আর রাশভারি মনে হতো তাঁকে। আমার বাবার সাথে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, সে হিসেবেও আমি তাঁর স্নেহ পেয়েছি। তাঁর বড়ছেলে লিটন আমার পরের ক্লাসে পড়লেও আমরা বন্ধুর মতো এক সাথে খেলাধুলা, ক্লাব, নাটক আর বাঁদরামি করতে করতে বড় হয়েছি। সে হিসেবেও বিমলস্যারের স্নেহধন্য হয়েছি। ভৌগোলিক দূরত্ব আর নাগরিক সময়ের অপ্রতুলতার কারণে এখন আর সেভাবে দেখা হবার সুযোগ ঘটে না। তবে এবার ছুটিতে গিয়ে বিমলস্যারের “তীর্থযাত্রার ত্রিশ দিন” বইটি পেয়ে খুব খুশি লাগলো। 




বিমলস্যার ২০০০ সালে ভারতে গিয়েছিলেন তীর্থভ্রমণে। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে তীর্থভ্রমণ করিয়ে আনার প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে এখন। এবং দলবদ্ধভাবে অনেকেই যাচ্ছেন তীর্থ করতে। পুণ্য আর ভ্রমণের আনন্দ দুটোই লাভ হয় মোটামুটি কম খরচে – এই বিশ্বাস যাদের আছে তাঁরা এই ভ্রমণে যান। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, দিল্লি, আগ্রা ইত্যাদি অনেক জায়গাউ ঘুরেছেন তিনি ত্রিশ দিন ধরে। 


বর্ণনায় এক ধরনের সারল্য আছে, অকপটতা আছে। ভাষার গাঁথুনি সহজ। অনেকসময় নির্ভুলও নয়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর সহজ সরল বিবরণ বলেই বেশ ভালো লাগে পড়তে। পড়তে পড়তে মনে হয় লেখক সামনে বসেই বলছেন কথাগুলি। 


ভ্রমণ কাহিনির কিছু কিছু জায়গায় ধর্মীয় ব্যাখ্যাও আছে। তীর্থযাত্রার বর্ণনাতে ধর্মতীর্থের বর্ণনা তো থাকবেই। 


বাংলাদেশী তীর্থযাত্রীদের ভারতীয় পরিচয়ে কম টাকার টিকেটে তাজমহলে ঢুকিয়ে দেয়া, বিভিন্ন সেবায়তনে থাকা, তিন বেলা পথের ধারে বাস থামিয়ে রান্না করে খাওয়া, প্রকৃতিতে প্রকৃতি সারা কোনো কিছুই বাদ যায়নি বর্ণনা থেকে। এখানেই লেখকের সাধু সার্থকতা। 


লেখকের বড়ছেলে অ্যাডভোকেট লিটন কান্তি গুহর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি সব জায়গায় হয়তো পাওয়াও যাবে না। আমাদের লাইব্রেরিতে এক কপি সংগ্রহ করা হয়েছে। পড়ে খুব ভালো লাগলো। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts