Thursday 21 July 2022

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌনহয়রানি

 


সারা পৃথিবীতেই শিক্ষাঙ্গনকে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ অঙ্গন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। সন্তান যেমন তার মায়ের বুকে নিরাপদে থাকে, তেমনি শিক্ষার্থীরাও তাদের ক্যাম্পাসে সবচেয়ে নিরাপদে থাকার কথা। যে শিক্ষায়তন থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করি, সেই শিক্ষাঙ্গনকে আমরা সারাজীবন সম্মান করি আলমা ম্যাটার হিসেবে। আলমা ম্যাটার শব্দযুগলের আক্ষরিক অর্থ অনেকটা ধাত্রী মায়ের মতো – যে আমাদের আদরযত্নে লালনপালন করে, শিক্ষা দিয়ে, নিরাপত্তা দিয়ে কাজের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। শিক্ষাঙ্গনের ভালোমন্দ সবকিছুই নির্ভর করে তার নীতিনির্ধারকদের উপর। বাংলাদেশের  বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকরা ভীষণ ক্ষমতাবান। পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কীভাবে চলে তা তাঁদের না জানার কথা নয়। নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা থাকলে শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানিসহ যেকোনো ধরনের অন্যায়ের প্রতিরোধ শুধু নয়, নির্মূল করাও যে অসম্ভব নয়, তা সবাই জানে। কিন্তু বড়কর্তারা লোভের বশে, আর ছোটকর্তারা বড় হতে পারবে না এই ভয়ের বশে সবসময়ই একটা নতজানু নীতি বজায় রেখেছে। পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই – যেখানে কোন অন্যায় ঘটনা প্রায় হয় না বললেও চলে – সেখানকার ক্যাম্পাসেরও বিভিন্ন জায়গায় জরুরি ফোনবুথ থাকে। একটা বোতাম টিপলেই  নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছে ফোন চলে যায়। নিরাপত্তা রক্ষীরা সেখানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বেতন নেয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না। কোন ঘটনা ঘটলে, বা ঘটার উপক্রম ঘটলেও – তা ধামাচাপা না দিয়ে সেই ঘটনার পুঙ্খানুপুংখ তদন্ত করা হয়, এবং সেরকম ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে তার ব্যবস্থা করা হয়।

আমার প্রিয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সাথে একই রকমের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গত পঞ্চাশ বছরে অনেকবার ঘটেছে। অথচ ক্যাম্পাস ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রতিটি ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে যেকোনোভাবে – শক্তি দিয়ে কিংবা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন থামানো হয়েছে, কিন্তু প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কষ্ট লাগে – যখন দেখি যারা এক সময় শিক্ষার্থী হিসেবে এই একই অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তা হবার পর হাত গুটিয়ে বসে আছেন আরো উপরে উঠার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে।

রাতারাতি হঠাৎ সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে এটা আশা করার কোন উপায় নেই। ক্যাম্পাসে ঢুকে যারা শিক্ষার্থীদের সম্ভ্রম নষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে, তাদের মতো নষ্ট মানুষ কীসের ক্ষমতার জোরে বুক ফুলিয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরে তা সবাই জানে। নষ্টরা যে পার্টির ছায়াতেই থাকুক, তাদের নষ্ট বলে পরিত্যাগ করার সৎ সাহস বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের কেন থাকবে না?

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে দেখে ভালো লাগছে। আশা করি একদিন তারা যখন নীতিনির্ধারক হবে, তাদের এই প্রতিবাদী মনোভাব অটুট থাকবে।
*প্রতিবাদের ছবিটি নিয়েছি তন্ময় শাওনের ওয়াল থেকে।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts