Saturday, 21 May 2022

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন ২০২২

 



অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল ইলেকশান হয়ে গেল একটু আগে। এখন ভোট গণনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দেয়া হয়ে গেলো এই দেশে। অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের  মতোই আমারও রাজনীতির ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু ভোট দেয়া এখানে বাধ্যতামূলক। তাই দিতে হয়। কিন্তু এদেশে নির্বাচনের ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই খুশির ব্যাপার বলে মনে হয়। নাগরিক অধিকার বলে উচ্চকন্ঠ হতে দেখা যায় প্রায় সব দেশেই। কিন্তু নাগরিক দায়িত্বের ব্যাপারটা সেভাবে গুরুত্ব পায় না। এখানে নাগরিক দায়িত্বের ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দেয়া হয়। এই দায়িত্ব পালন করা বাধ্যতামূলক।

এখানে ভোট দিতে গেলে যেসব ব্যাপার দেখে আমার আনন্দ লাগে সেগুলির মধ্যে আছে – ভোট কেন্দ্রের কোথাও কোন পুলিশ নেই, নির্বাচন কমিশননিযুক্ত নিরস্ত্র কর্মীরাই ভোট পরিচালনা করে, নির্বাচনী সহিংসতা নামক কোন ব্যাপার এখানে ঘটে না, ভোট দিয়েছি কি না প্রমাণ করার জন্য আঙুলে কোন কালি লাগানো হয় না –– একবার ভোট দিয়ে আরেকবার যে দিতে যাবে না সেই বিশ্বাসে নাগরিকের সততা ও দায়িত্বকে সম্মান করা হয় সবখানে, বেশিরভাগ কেন্দ্রেই কোন পরিচয়পত্রও দেখাতে হয় না; কেবল নাম-ঠিকানা বললেই হয়, এমপি পদে যে আসনে যতজন প্রার্থী হন – তাদের সবাইকেই ভোট দিতে হয় পছন্দ অনুসারে ১, ২, ৩ ইত্যাদি লিখে। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রার্থীই ভোট পান – শুধু যিনি সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রথম পছন্দ তিনিই জিতেন।

আর কয়েক ঘন্টা পরেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে – বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবার দায়িত্বে আসবেন, নাকি লেবার পার্টি সরকার গঠন করবে। যেই করুক, অন্যদল তাকে অভিনন্দন জানিয়ে হাসিমুখে সরে যাবে।

ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিস বলে একটা ব্যাপার আছে। পৃথিবীর উন্নত ব্যবস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার অবিরাম চেষ্টার নামই সত্যিকারের উন্নতি। অস্ট্রেলিয়ায় সরকারের মেয়াদ তিন বছর নির্ধারণ করা হয়েছে এজন্য যে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকলে দায়িত্বে অবহেলার ভাব চলে আসে, দায়িত্বকে ক্ষমতা বলে ভাবতে শুরু করে। দুর্নীতিও হতে পারে। কম মেয়াদী হলে নির্বাচিতদের ভয় থাকে – কিছুদিন পরেই দায়িত্ব হারানোর। এদেশের রাজনীতিকরা জনগণকে সমীহ করেন, কারণ জনগণের ভোটেই আছে তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত। এদেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করলে, দুর্নীতি করলে – রাজনৈতিক দলগুলি তাদেরকে বহিস্কার করতে বাধ্য হয়। না হলে তাদের আবার নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা শূন্য হয়ে যায়। দুর্নীতিবাজকে ভোটের মাধ্যমে উপড়ে ফেলার দায়িত্বটা তখন নাগরিকরাই নেয়।

আমার প্রশ্ন হলো এরকম একটা কল্যাণকর সমাজব্যবস্থা যদি অস্ট্রেলিয়া তৈরি করতে পারে, কানাডা পারে, ইওরোপের অনেক দেশ পারে – পৃথিবীর অনেকগুলি দেশ পারে না কেন?


No comments:

Post a Comment

Latest Post

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র ও যন্ত্রের লেখাপড়া

  মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই ...

Popular Posts