এই বইটি একটু একটু করে পড়তে দীর্ঘদিন লেগেছে। থ্রিলার একটানে পড়ে ফেলার কথা। টানটান উত্তেজনা থাকার কথা। ক্লাস নাইন-টেন-ইলেভেনে যেভাবে দস্যু বনহুর পড়তাম, এখনো সেভাবে পড়তে পারলে বেশ লাগতো। এখন যে ভেতরের পাঠক মরে গেছে তা নয়, কিন্তু এখন কেমন যেন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে অনেক। কাজও বেড়েছে, একসাথে অনেক কাজ করার মাল্টি টাস্কিং নামে এক অভ্যাস তৈরি হয়েছে। তাতে যে খুব কাজ হয়ে যায় তা নয়। তবে অনেক কাজই শুরু হয়, কোনোটাই ঠিকমতো শেষ হয় না। পল ডিরাক যে একসাথে একটির বেশি কাজ কখনোই করতেন তা – তার সুফল তিনি হাতে হাতে পেয়েছিলেন।
মাসুদ রানা সিরিজের সপ্তম বই ‘শত্রু ভয়ঙ্কর’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। হয়তো আমার জন্মেরও আগে। ক্লাস টেনে পড়ার সময় সুশান্ত যখন কাঞ্চন নগর থেকে পটিয়ায় এসে মাসুদ রানার বই কিনে নিয়ে যেতো, তখন আমি পটিয়াতে ছিলাম। ইচ্ছে করলে মাসুদ রানা পড়তে পারতাম। কিন্তু আমি সেসময় দস্যু বনহুরই শুধু পড়েছি। কেন যে মাসুদ রানা তখন পড়িনি জানি না। এখন এই বয়সে যখন মানুষ ভারী ভারী বই পড়ে বিজ্ঞজনোচিত আচরণ করে, আমি তখন কৈশোরের স্মৃতিকাতরতা নিয়ে মাসুদ রানা পড়ি। তাতে মাসুদ রানার আরোপিত বীরত্বে যতটা যা আমোদিত হই, তার চেয়েও বেশি ফিরে আসে আমার কৈশোরের স্মৃতি।
শত্রু ভয়ংকর কবে পড়তে শুরু করেছিলাম মনে নেই। শেষ করলাম কুবার পিডিতে গিয়ে। মেলবোর্ন থেকে এডেলেইড যাবার পথে এয়ারপোর্ট আর প্লেনে বসেও পড়েছি। ফোনে গাদা গাদা বই থাকে, এটা যে কী পরিমাণ সুবিধা দেয়!
এবার আসি শত্রু ভয়ঙ্করের কথায়। পাকিস্তানের স্পাই মাসুদ রানাকে ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয় মূলত রাশিয়ার আণবিক বোমা এম-৩১৫ – যা চুরি হয়ে গেছে তা খুঁজে বের করার জন্য। সেজন্য নানারকম নাটকীয় ঘটনা ঘটায়। ইস্তাম্বুলে খুনের অপরাধে বিচার হবার সময় যে সুন্দরী যোহরা হাসানকে সাথে নিয়ে পালায়। যেরকম ধারণা করা হয়, সেরকমই ঘটে – যোরা রানাকে ভালোবেসে ফেলে। স্বাভাবিক। এদিকে যোরার বাবাকে জিম্মি করে ফেলে ইস্তাম্বুলের মাফিয়া চিফ ইয়াকুব বে।
মাসুদ রানা, জাহাজ, জাহাজের ভেতর যুদ্ধ যুদ্ধ, এবং সবশেষে মধুরেন সমাপয়েৎ। আলাদা করে কেমন লেগেছে বলার কোন মানে হয় না।
No comments:
Post a Comment