Sunday 27 November 2022

অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস

 



সেলসিয়াস শব্দটির সাথে আমরা খুব পরিচিত। তাপমাত্রার যে একক পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে ব্যবহৃত হয় – তার নাম সেলসিয়াস। কিন্তু এই শব্দটি কোত্থেকে এসেছে সে ব্যাপারে হয়তো আমরা খুব একটা খোঁজখবর রাখি না। হিট অ্যান্ড টেম্পারেচার – অর্থাৎ তাপ এবং তাপমাত্রা যে এক জিনিস নয় সে জ্ঞান মানুষের হয়েছে হাজার বছর আগে। আজ থেকে প্রায় ১৮৫০বছর আগে গ্রিক বিজ্ঞানী গ্যালেন তাপমাত্রা মাপার জন্য যন্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন ১৭০ খ্রিস্টাব্দে। এরপর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি তাপমাত্রা মাপার সেন্টিগ্রেড স্কেল। 

১৭৪২ সালে সুইডেনের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস পানির হিমাঙ্ককে ১০০ ডিগ্রি আর ফুটনাঙ্ককে ০ ডিগ্রি ধরে সেন্টিগ্রেড স্কেলের প্রবর্তন করেন। এর আগে ১৭১৪ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ফারেনহাইট চালু করেছিলেন ফারেনহাইট স্কেল। ফারেনহাইট স্কেলে ৩২ ডিগ্রিকে পানির হিমাঙ্ক এবং ২১২ ডিগ্রিকে পানির ফুটনাঙ্ক ধরে নিয়ে মধ্যবর্তী পার্থক্যকে ১৮০ ভাগে ভাগ করে এক ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার হিসেব করা হয়েছে। এই হিসেবটা বড্ড গোলমেলে হিসেব বলে সেলিসিয়াসের প্রবর্তিত সেন্টিগ্রেড স্কেলটাকে অনেক বেশি সহজ এবং গ্রহণযোগ্য মনে হলো সবার। কিন্তু একটু গোলমাল রয়ে গিয়েছিল গিয়েছিল। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ডিগ্রির পরিমাণ বাড়া উচিত। সেক্ষেত্রে ১০০ থেকে ০ -তে না গিয়ে ০ থেকে ১০০ ডিগ্রিতে যাওয়া উচিত। কিন্তু প্রস্তাবিত উল্টো স্কেলকে সোজা করার সময় পাননি অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস। ১৭৪৪ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। 

সেলসিয়াসের মৃত্যুর পর উদ্ভিদবিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস সেলসিয়াস স্কেলকে উল্টে দিয়ে ঠিক করে দেন। নতুন স্কেলে শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয়ে যায়, আর ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে। 

সেলসিয়াসের প্রবর্তিত সেন্টিগ্রেড স্কেল এরপর প্রায় দু’শ বছর ওভাবেই ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে জ্যামিতিক মাপজোকের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল। কোণের পরিমাণও ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হিসেবে মাপা হয় বলে তাপমাত্রা আর কোণের পরিমাপের মাপ আলাদা করতে ঝামেলা হচ্ছিল। তাই ১৯৪৭ সালে তাপমাত্রা মাপার একককে 'ডিগ্রি সেলসিয়াস' হিসেবে প্রচলন করা হয়।

সুইডিশ জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স সেলসিয়াসের জন্ম ১৭০১ সালের ২৭ নভেম্বর, সুইডেনের উপসালায়। যে পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল – সেই পরিবারের বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্য প্রায় দু’শ বছরের। তাঁর পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ সবাই ছিলেন বিজ্ঞানী। তাঁর বাবা নিলস সেলসিয়াস ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক। জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় দক্ষতা অর্জন করে অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস উপসালা ইউনিভার্সিটিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৭৩০ সালে। ১৭৪৪ সালের ২৫ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানেই অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৭৪০ সালে তাঁর তত্ত্বাবধানে উপসালা ইউনিভার্সিটিতে তৈরি হয় মানমন্দির।

সেলসিয়াসের বৈজ্ঞানিক জীবনে সবচেয়ে বেশি অবদান জ্যোতির্বিজ্ঞানে হলেও – তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন তাঁর তাপমাত্রা পরিমাপের স্কেলের মধ্যে।


No comments:

Post a Comment

Latest Post

নিউক্লিয়ার শক্তির আবিষ্কার ও ম্যানহ্যাটন প্রকল্প

  “পারমাণবিক বোমার ভয়ানক বিধ্বংসী ক্ষমতা জানা সত্ত্বেও আপনি কেন বোমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন?” ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের ‘কাইজো’ ম্য...

Popular Posts