Thursday 25 April 2019

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন - দ্বাবিংশ পর্ব


২৭ জুলাই ১৯৯৮ সোমবার

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব আর্কিটেকচার, বিল্ডিং এণ্ড প্ল্যানিং বা সংক্ষেপে এবিপির বেশ নামডাক আছে। অস্ট্রেলিয়ার অনেক বড় বড় স্থাপনা গড়ে ঊঠেছে এ ফ্যাকাল্টি থেকে পাস করা স্থপতিদের হাতে কিংবা এর শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে। অথচ কেন জানি না- পুরো ইউনিভার্সিটির কয়েকশ বিল্ডিং এর মধ্যে হাতে গোনা যে কটা বিশ্রী বিল্ডিং আছে- আর্কিটেকচার বিল্ডিং-টাই হলো তাদের সেরা। আমার ধারণা অবশ্য ভুলও হতে পারে। তোমার মতে আমার সৌন্দর্যজ্ঞানতো টেরিবল। সে যাই হোক- এই বিল্ডিংটাকে এড়িয়ে চলার কোন উপায় নেই আমার। কারণ এর নিচের তলার একদিকে পোস্ট অফিস আর অন্যদিকে কমনওয়েলথ ব্যাংক। সকালে চিঠি পোস্ট করে ফেরার পথে ব্যাংকে ঢুকলাম।
            সোমবারের সকাল। ব্যাংকে মোটামুটি ভীড়, পাঁচটা কাউন্টারেরই ব্যস্ততা। গত চৌদ্দ তারিখ একাউন্ট খোলার পর একটা কাগজে একাউন্ট নাম্বার লিখে দিয়েছিল। বলেছিল চারদিন পর এসে ব্যাংক-কার্ড নিয়ে যেতে। অথচ এলাম তেরো দিন পর। একাউন্ট নম্বরটা দ্রুত টাইপ করলেন বুড়ো ভদ্রলোক- জুলিয়ান। মনিটরে চোখ রেখেই প্রশ্ন করলেন-গট এন এড্রেস নাউ?
            বাংলাদেশের ঠিকানা দিয়েই একাউন্ট খুলেছিলাম। এখন বাসার ঠিকানা জানিয়ে দিলাম। জুলিয়ান একটা ড্রয়ার থেকে কয়েকটি খাম বের করে এগিয়ে দিলেন আমার দিকে- ব্যাংকের চিঠি। বললেন, কী-কার্ড আর পিন নম্বর আছে আলাদা আলাদা খামে। পিন নম্বর কাউকে বলো না
            স্কলারশিপের টাকা জমা হয়েছে কি না দেখা দরকার। জিজ্ঞেস করলাম। ব্যাংকিং সম্পর্কে আমি যে কিছুই জানি না তা বুঝতে জুলিয়ানের সময় লাগলো না একটুও। হাসিমুখে বললেন, ইউ ক্যান চেক ইট ফ্রম এনি কমনওয়েল্‌থ এ-টি-এম। এ-টি-এম থেকে একাউন্ট ব্যালেন্স দেখে নিতে পারো, অথবা ফোন ব্যাংকিং। যে কোন ফোন থেকে ১৩২২২১ নম্বরে ফোন করে ফোন ব্যাংকিং করা যাবে
            ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নতুন আমার কাছে। জুলিয়ান বুঝতে পারলেন আমার অবস্থা। কাউন্টারের পাশে দেয়ালে লাগানো টেলিফোনটা দেখিয়ে বললেন, ওটা থেকে ডায়াল করো ১৩২২২১ নম্বরে
            মজা লাগলো যান্ত্রিক কন্ঠস্বর শুনে। যন্ত্রের নির্দেশ মত নম্বর টিপতে টিপতে ফোন ব্যাংকিং সেট হয়ে গেলো। এটার জন্যও একটা ছয় অংকের পিন নম্বর সেট করতে হলো। একাউন্ট ব্যালেন্স জেনে খুশি হলাম। পাঁচ ডলার জমা দিয়ে একাউন্ট খুলেছিলাম- সেখানে এখন পাঁচশ ডলারেরও বেশি জমা হয়েছে। জুলিয়ানকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
            প্লাস্টিকের ছোট্ট একটা কার্ড- পেছনে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ লাগানো। ফটোকপি কার্ডের সমান মাপের। ঝকঝকে নতুন কার্ডে সতেরো অংকের নম্বরের নিচে আমার নাম খোদাই করা। দেখেই ভালো লেগে গেলো। নিজেকে কিছুটা হলেও গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।
            অটোম্যাটেড টেলার মেশিন বা এ-টি-এম ব্যবহার করলাম আজ প্রথম। এদেশে এগুলো হয়তো অনেক দিন ধরেই আছে, কিন্তু এই আটানব্বই সালেও বাংলাদেশে এ-টি-এম পৌঁছায়নি। এখানে যেমন যেখানে-সেখানে এ-টি-এম, বাংলাদেশে কি তা সম্ভব হবে? মেশিন ভরা টাকার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরীও লাগবে আমাদের। কোন রকমের ট্রেনিং ছাড়াই এ-টি-এম ব্যবহার করতে পেরে নিজেকে বেশ ইস্‌মাট মনে হচ্ছে। (শব্দটির কথা মনে আছে?) পঞ্চাশ ডলারের কিছু কড়কড়ে নোট পকেটে ভরে ডিপার্টমেন্টে ফেরার সময় মনটা খারাপ হয়ে গেল। শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যতবারই স্কলারশিপের টাকা পেতাম- বন্ধুরা হৈ চৈ করে ধরে নিয়ে যেতো রেস্টুরেন্টে। সবাই তখন রাজা হয়ে উঠতাম কিছু সময়ের জন্য। টাকার একটা অংশ উড়ে যেতো কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। অথচ আজ! কেউই কাছে নেই যার সাথে হৈ চৈ করা যায়। তাছাড়া আমাদের আনন্দ আর এদের আনন্দেও কত পার্থক্য। এখানে অনেকে একসাথে খেতে যায় বটে, কিন্তু কেউ কাউকে খাওয়ায় না।
            অফিসের সামনে এসে একটু তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল কেনের সাথে। মর্নিং প্রাডিব
            মর্নিং কেন্‌
            হ্যাড এ গুড উইকএন্ড?এ জাতীয় প্রশ্ন ভদ্রতার ব্র্যাকেটে বন্দী। সপ্তাহান্তে আমি কী করেছি তা আসলেই জানতে চাচ্ছেন ভাবার কোন কারণ নেই। তাই ইয়েস বলার পরই প্রসঙ্গ পরিবর্তন।
            বাই দি ওয়ে, লেসের সাথে কি তোমার পরিচয় হয়েছে?
            না
            লেস- মানে লেস অ্যালেন। আমাদের গ্রুপেরই একজন। সে আবার পোস্টগ্রাজুয়েট রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর। ৬০২ নম্বর রুমে তার অফিস
            আমি কি দেখা করবো তাঁর সাথে?
            দেখো সে অফিসে আছে কি না। আরেকটা কথা, লেস ফোর্থ-ইয়ারের একটা কোর্স পড়াচ্ছে এ সেমিস্টারে। স্ক্যাটারিং থিওরির কোর্সটা তোমার কাজে আসবে। তুমি চাইলে তার লেকচারে যোগ দিতে পারো
            এ রকম কোন কোর্সের কথা আমিও ভাবছিলাম। কেন্‌ ঠিকই বুঝতে পেরেছেন আমার কী লাগবে। কেন্‌কে ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে গেলাম করিডোরের শেষ প্রান্তে। ৬০২ নম্বর রুমের দরজায় লেখাঃ এসোসিয়েট প্রফেসর লেস অ্যালেন। বন্ধ দরজায় মৃদু টোকা দিলাম। কোন সাড়াশব্দ নেই। তার মানে তিনি অফিসে নেই। ফিরে এলাম নিজের ডেস্কে।
            ম্যান্ডি এখনো আসেনি। ইমাজিন হয়তো ক্লাসে গেছে। তার ডেস্কের পাশে দেয়ালে ঠেকানো একটা সাইকেল দেখা যাচ্ছে। ডেস্কের ওপর ময়লা ব্যাকপ্যাক। পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ইমাজিন যথেষ্ঠ উদাসীন। পিটারও মনে হয় আসেননি আজ। হিগ্‌স কম্পিউটার খালি পড়ে আছে। গত কয়েকদিনের রপ্ত করা ইউনিক্স অপারেটিং অনুশীলন করা যাক।
            ইন্টারনেটের সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয় হয়েছে কিছুদিন হলো। বাংলাদেশে থাকতে আমার বন্ধু অঞ্জন আর টিটুর ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার সার্ভিস-এ গিয়ে ই-মেইল করতে হয়েছিল কয়েকবার। তখন ইন্টারনেটের সাথে পরোক্ষ পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু সে অভিজ্ঞতা তেমন কোন কাজে লাগলো না এখানে। স্টুডেন্ট ডায়েরিতে ইন্টারনেট ইউজার গাইড দেয়া আছে। ওটা কাজে লাগিয়ে নেটস্কেপ ব্যবহার করতে করতে মনে হলো অন্যরকম একটা নতুন জগতের দরজা খুলে গেছে আমার সামনে। গবেষণা শিক্ষার্থী হবার সুবাদে আন-লিমিটেড ইন্টারনেট। ঘরে বসেই সারা-দুনিয়া ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ এখন আঙুলের ডগায়। ওয়েব এড্রেস টাইপ করে এন্টার করলেই হলো।
            ঘন্টা দেড়েক সময় যে কীভাবে কেটে গেলো টেরও পেলাম না। অন্তর্জালের ঘোর কাটলো দরজা খোলার শব্দে। ম্যান্ডির প্রবেশ। দ্রুত এসে ডেস্কের ওপর ব্যাকপ্যাকটা ছুড়ে ফেলে আমার মাথাটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলো। ম্যান্ডির যে একটু গায়ে-পড়া ভাব আছে তা এ কদিনে বুঝতে পেরেছি।
            হোয়াট ইউ ডুয়িং? সার্ফিং!- সার্ফিং শব্দটা নতুন আমার কাছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয়ে পুরনো শব্দের নতুন অর্থবোধক ব্যবহার শুরু হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি কিছু বলার আগেই ম্যান্ডি ব্যস্ত হয়ে বললো, উহ্‌ বারোটা বেজে গেছে। আমার হেয়ার-ড্রেসারের সাথে এপয়ন্টমেন্ট আছে। বাই বাই ঝড়ো হাওয়ার মত চলে গেল ম্যান্ডি রুমের দরজা খোলা রেখেই। দরজা খোলা রেখে কাজ করে এখানে সবাই। কোন দরজাতেই পর্দা নেই। আমরা রক্ষণশীল দেশের মানুষ, আড়াল পছন্দ করি। উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেবো ভাবছি- এমন সময় লেসের প্রবেশ।
            লাল চুল আর লাল দাড়ির এই ভদ্রলোকই যে প্রফেসর লেস অ্যালেন তা দেখামাত্রই বুঝতে পারলাম। একটু আগেই আমি আমাদের থিওরি কিউ গ্রুপের ওয়েবসাইটে গিয়ে কেনের পাশাপাশি লেসের বায়োডাটাও পড়েছি, ছবি দেখেছি। ওই ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যেই আমার নাম ও রিসার্চ টপিক যুক্ত হয়েছে। অবশ্য ছবি এখনো দেয়া হয়নি।
            হাই প্রাডিব। আই এম লেস
            দাঁড়িয়ে লেসের সাথে হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে খেয়াল করলাম তিনি খোসা-ছাড়ানো একটা বড় কলা ডান হাত থেকে বাম হাতে হস্তান্তরিত করে ডান হাতটা এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। মনে হলো ভদ্রলোক ঠিকমত কলা খেতে জানেন না। সম্পূর্ণ খোসা একেবারে ফেলে দিয়ে এভাবে কলা খেতে এর আগে শাহীন কলেজে দেখেছিলাম আমার একজন সহকর্মীকে। অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় কি সবাই এভাবেই কলা খায়? কলা অস্ট্রেলিয়ান ফল নয়। পাঞ্জাবী শিখরা এসে প্রথম কলার চাষ শুরু করে এখানে প্রায় দেড়শ বছর আগে। তবে কি শিখরাও এভাবে কলা খায়? জানি না তো।
            লেস দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা রঙের মানুষ। চোখ দুটো স্বচ্ছ নীল। মুখে যদিও একটা হাসির রেখা লেগে আছে- আমার কেন যেন মনে হচ্ছে প্রয়োজনে ভীষণ হিংস্র হয়ে উঠতে পারেন এই লোক। এরকম মনে হওয়ার পেছনে একটাই মাত্র কারণ খুঁজে পেয়েছি তা হলো- গান্ধী সিনেমায় দেখা দক্ষিণ আফ্রিকার যে পুলিশ অফিসার গান্ধীর হাতে লাঠির বাড়ি মেরেছিল সেই পুলিশ অফিসারের চেহারার সাথে লেসের চেহারার হুবহু মিল।
            সো প্রাডিব, আই হোপ ইউ সেটেল্ড ইন- আশা করি তুমি সব গুছিয়ে নিয়েছো
            হ্যাঁ, একপ্রকার গুছিয়ে নিয়েছি
            স্কলারশিপ চালু হয়েছে?
            হ্যাঁ
            ভেরি গুড। তাহলে এখানে একটা স্বাক্ষর করে দাও
            স্কুল অব গ্রাজুয়েট স্টাডিজের একটা ফর্ম। আমার রিসার্চ প্রজেক্ট, সাথে আরো সব তথ্য। আশ্চর্য হয়ে গেলাম এই দেখে যে রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর নিজে এসেছেন শিক্ষার্থীর কাছে সাইন নেয়ার জন্য। মনে মনে বললাম, লেস স্যার, আপনি যদি আমাদের দেশের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর হতেন, এই কাজটা হতো এভাবেঃ আপনি আপনার সহকারীকে বলতেন আমাদের খবর দেয়ার জন্য। আমরা সব কাজ ফেলে আপনার অফিসের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করতাম। আপনার সহকারী আমাদের বেশ কয়েকবার ধমক দিয়ে বলতেন- পরে আসবেন, স্যার এখন ব্যস্ত আছেন। আমরা আপনার সহকারীকে খুশি করে আপনার ব্যস্ততা কমানোর চেষ্টা করতাম। মাস্টার্সের গবেষণা প্রস্তাবের দরখাস্তে স্যারের সাইন নেয়ার জন্য স্যারের সহকারী আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা করে নিয়েছিলেন।
            কেন্‌ বলছিলো তুমি নাকি আমার স্ক্যাটারিং থিওরির লেকচারে যোগ দিতে চাও?
            হ্যাঁ, যদি আপনি অনুমতি দেন
            স্বচ্ছন্দে। সপ্তাহে তিনটা লেকচার। মঙ্গল, বৃহস্পতি আর শুক্রবার। সকাল দশটা থেকে বারোটা। গত সপ্তাহে তিনটা লেকচার হয়ে গেছে। কাল সকালে চার নম্বর লেকচার। ফিজিক্স পোডিয়ামের ১১ নম্বর লেকচার রুমে
            থ্যাংক ইউ স্যার
            কল মি লেস্‌। কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবে। আমাকে এখন লাঞ্চ করেই ছুটতে হবে একটা মিটিং-এ বলে হাতে ধরা কলায় কামড় দিয়ে চিবুতে চিবুতে চলে গেলেন।
            তাহলে কাল থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে। এদেশের পাঠ-পদ্ধতি কেমন কাল কিছুটা বুঝতে পারবো।
            ডিপার্টমেন্টাল একাউন্টে দিঠুনের কোন ই-মেইল না পেয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছি। আজ তার এস-এস-সির রেজাল্ট বেরোনোর কথা ছিল। মনে হয় পিছিয়ে গেছে। গতকাল দিদিভাইর সাথে তাকেও ইমেইল করেছিলাম। টিটু ইমেইলে জানিয়েছে সে আমার ইমেইল প্রিন্ট করে দিদির বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। এখানে আসার সময় অঞ্জন আর টিটুকে বলে রেখেছিলাম আমি যদি ই-মেইল করি তা যেন প্রিন্ট করে দিদির বাসায় পাঠিয়ে দেয়।  অথবা ফোন করে জানালে বাসা থেকে কেউ এসে নিয়ে যাবে।  সামান্য প্রিন্টিং খরচের বিনিময়ে তারা যে আমার এতবড় উপকার করছে- কীভাবে তাদের ধন্যবাদ দেবো জানি না।
            সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে সেফওয়েতে গেলাম। এখানে জিনিস-পত্রের দাম মনে হচ্ছে প্রতিদিনই উঠানামা করে। আলুর দাম দেখে একটু অবাক লাগলো। কিছু আলু একেবারে পরিষ্কার করে ধোয়া- ধবধবে সাদা। দাম এক ডলার নব্বই সেন্ট মানে সাতান্ন টাকা কেজি। তার পাশেই রাখা আছে অপরিষ্কার আলু- চামড়ায় যাদের মাটি লেগে আছে এখনো- দাম  মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট অর্থাৎ পনেরো টাকা কেজি। হয়তো একই মাঠের আলু- শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতার কারণে দামের এত পার্থক্য। বুঝতে পারছি এদেশে শ্রমমূল্য অনেক ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের চেয়েও বেশি।      রান্না করেছি ডিম আলু আর মিষ্টিকুমড়া। রান্নাঘর থেকে বেরোবার সময় ডেভিডকে দেখেছি একটু করে। মনে হলো আমাকে দেখেই দ্রুত চলে গেলো নিজের রুমে। আমার বিশ ডলার ফেরৎ দেয়ার কথা কি ভুলে গেল সে?
            খাওয়া শেষ করে লিখতে বসেছিলাম। বাইরে ডেভিড, জোয়ানা আর ফিলের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কোন বিষয়  নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মাঝে মাঝে বেশ জোরে শোনা যাচ্ছে ফা.. ইউ। পিতা-পুত্রের মাঝে এরকম কুৎসিত বাক্যবিনিময় আমাদের দেশের বস্তিতেও শোনা যায়। কি আশ্চর্য মানুষের শরীর-ভাবনা। কত সুন্দর সুন্দর বিশেষণ আমরা আবিষ্কার করেছি শরীরের বর্ণনা দেয়ার জন্য, আবার সবচেয়ে কুৎসিত কথাগুলোও তৈরি হয়েছে এই শরীরকে ঘিরেই।
____________________

No comments:

Post a Comment

Latest Post

বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও

  পানি-দূষণের মাত্রা নির্ধারণের দ্রুততম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘টেথিস’ উদ্ভাবন করে গীতাঞ্জলি রাও যখন   ২০১৭ সালে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানীর শ...

Popular Posts